আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে কাজ, ভুল ভঙ্গিতে বসা বা শোওয়া, ব্যায়ামের অভাব- কোমর বা পিঠের ব্যথার জন্য এত দিন মূলত এগুলিকেই দায়ী করা হত। ব্যথা কমাতে পেনকিলার বা ফিজিওথেরাপির উপরই ভরসা রাখেন অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু বার বার ফিরে আসা এই যন্ত্রণা কি আপনাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে? আধুনিক গবেষণা এক নতুন শত্রুকে চিহ্নিত করছে, যা লুকিয়ে রয়েছে আপনার রান্নাঘরেই। অবিশ্বাস্য হলেও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আপনার খাবারের পাতে থাকা অতিরিক্ত চিনিই হয়তো এই নাছোড়বান্দা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ।

চিনি এবং ব্যথার অদৃশ্য যোগসূত্র ঠিক কোথায়? প্রথম দৃষ্টিতে মিষ্টির সঙ্গে কোমর ব্যথার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু শরীরের অন্দরের রসায়নটা বুঝলে এই যোগসূত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মূলত তিনটি প্রধান কারণকে এর জন্য দায়ী করছেন:
১। প্রদাহের আগুন
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার সবচেয়ে বড় কুফল হল এটি শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন তৈরি করে। যখন আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি খাই, তখন শরীর থেকে সাইটোকাইন নামক এক ধরনের প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিন নির্গত হয়। এই প্রদাহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অস্থিসন্ধি, মাংসপেশী ও লিগামেন্টে প্রভাব ফেলে। কোমর এবং পিঠের সূক্ষ্ম মাংসপেশী ও স্নায়ু এই প্রদাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে ব্যথা ও আড়ষ্টতা বাড়ে। আর যদি আগে থেকেই কোমরে কোনও সমস্যা থাকে, অতিরিক্ত চিনি সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
২। গ্লাইকেশন
রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি শরীরের প্রোটিনের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে ‘অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড-প্রোডাক্টস’ নামক ক্ষতিকর যৌগ তৈরি করে। এই যৌগ আমাদের শরীরের কাঠামো ধরে রাখতে সাহায্যকারী কোলাজেন এবং ইলাস্টিন নামক প্রোটিনকে আক্রমণ করে। আমাদের মেরুদণ্ডের ডিস্ক এবং লিগামেন্টগুলি মূলত কোলাজেন দিয়েই তৈরি। কিন্তু এই যৌগের প্রভাবে কোলাজেন ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং সামান্য আঘাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এর অনিবার্য পরিণতি হল পিঠ ও কোমর ব্যথা।
৩। ওজন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত চাপ
চিনির সঙ্গে কোমর ব্যথার সবচেয়ে সহজবোধ্য সম্পর্কটি হল ওজন বৃদ্ধি। চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়তে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে মেদ হিসেবে জমা হয়, বিশেষ করে পেটের চারপাশে। এই বাড়তি ওজন বা ভুঁড়ি মেরুদণ্ডের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে এবং মাংসপেশীর উপর অতিরিক্ত ভার পড়ে, যা থেকে কোমর ব্যথা হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
মুক্তির উপায় কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনযাত্রা পরিবর্তনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সরাসরি চিনিযুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি, সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, সস, প্যাকেজড ফলের রস-এগুলিতে থাকা লুকানো চিনি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফল, গোটা শস্য এবং প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ান, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
তবে মনে রাখবেন, কোমর বা পিঠের ব্যথার একাধিক কারণ থাকতে পারে। তাই নিজে থেকে কোনও সিদ্ধান্তে না পৌঁছে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে আপনাকে অনেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে এবং সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
