আজকাল ওয়েবডেস্ক: হার্ট অ্যাটাক মানেই হৃৎপিণ্ডের পেশির স্থায়ী ক্ষতি এবং আজীবন হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি- এই ধারণা হয়তো এ বার অতীত হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো-র বিজ্ঞানীরা এমন এক যুগান্তকারী ইঞ্জেকশন তৈরি করেছেন, যা হার্ট অ্যাটাকের পর হৃৎপিণ্ডকে ভিতর থেকে সারিয়ে তুলতে সক্ষম। একটি মাত্র ইঞ্জেকশনই হৃদপেশিকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকের পর অ্যানজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এই পদ্ধতিতে রোগীর জীবন বাঁচানো গেলেও হৃৎপিণ্ডের যে পেশিগুলি অক্সিজেনের অভাবে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলির বিশেষ উন্নতি হয় না। ফলে পরবর্তীকালে সেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলিতে ক্ষত বা ‘স্কার’ তৈরি হয়, যা হৃৎপিণ্ডের পাম্প করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং রোগী ধীরে ধীরে হার্ট ফেলিওরের দিকে এগিয়ে যান।
কিন্তু এই নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় মধ্য দিয়েই হৃদযন্ত্রকে সারিয়ে তোলার কৌশলকে কাজে লাগায়। তাঁরা ‘প্রোটিন-লাইক পলিমার’ (পি এল পি) নামক এক বিশেষ আণবিক পলিমার তৈরি করেছেন। এই পলিমার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হলে তা হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব সুরক্ষা এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাদের শরীরে ‘কিপ-১’ নামে একটি প্রোটিন থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় কোষের মেরামত প্রক্রিয়াকে আটকে রাখে। নতুন এই ইঞ্জেকশনটি শরীরে প্রবেশ করে সোজাসুজি এই ‘কিপ-১’ প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর ফলে ‘এনআরএফ-২’ নামক অন্য একটি রক্ষাকর্তা প্রোটিন মুক্ত হয়ে যায়। এই ‘এনআরএফ-২’ প্রোটিনই হল আসল কারিগর, যা হৃদযন্ত্রের নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। এর প্রভাবে তিনটি মূল কাজ হয়-
১। প্রদাহ কমে যায়: হার্ট অ্যাটাকের পর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তা দ্রুত কমতে শুরু করে।
২। কোষের মৃত্যু আটকায়: যে কোষগুলি মারা যাওয়ার পথে এগোচ্ছিল, সেগুলিকে নতুন করে বাঁচিয়ে তোলে।
৩। নতুন রক্তনালী তৈরি হয়: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রক্ত সরবরাহ বাড়াতে নতুন রক্তনালী তৈরিতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
গবেষণাগারে হৃদপেশি এবং ইঁদুরের উপর চালানো পরীক্ষায় এই ইঞ্জেকশনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গিয়েছে, অল্প মাত্রার একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এর কাজ শুরু হয়ে যায় এবং তার প্রভাব কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এর ফলে শুধু যে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা অনেকটাই উন্নত হচ্ছে তাই নয়, দীর্ঘস্থায়ী হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকিও নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।
‘অ্যাডভান্সড মেটেরিয়ালস’ নামক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাটি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। ‘গ্রোভ বায়োফার্মা’ নামক একটি সংস্থা এই চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে। গবেষকদের দাবি, এই ইঞ্জেকশন যদি মানবদেহে সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা পদ্ধতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোই নয়, রোগীকে এক সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়াই হবে এই নতুন চিকিৎসার মূল লক্ষ্য।
