আজকাল ওয়েবডেস্ক: শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর  ক্যাম্পাসে হস্টেলের খাবার সমস্যা নিয়ে ফের তীব্র অসন্তোষে ফেটে পড়লেন আবাসিক ছাত্রীরা। ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত নিয়ম মেনে কুপন কাটা থাকলেও, পৌষমেলার ছুটিকে অজুহাত করে হঠাৎ করে খাবার দেওয়া বন্ধের নোটিশ জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল কিচেন। 

ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন হস্টেলে থাকা ছাত্রীদের একটি বড় অংশ। অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে হস্টেলে থাকা অবস্থায় বাইরে থেকে খাবার আনার উপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অথচ সেই হস্টেল সংলগ্ন জেনারেল কিচেনই মেলার ছুটিতে খাবার দিতে অস্বীকার করছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রোক্টর অফিস থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা না হওয়ায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে বিক্ষোভে সামিল হন শ্রীসদন, বিড়লা, গোয়েঙ্কা-সহ একাধিক হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা। শান্তিনিকেতনের হিন্দি ভবন সংলগ্ন সেকেন্ড গেটের কাছে থালা বাজিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদে সামিল হন তাঁরা। ছাত্রীরা জানান, দিনের পর দিন সমস্যার কথা জানিয়েও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাধ্য হয়েই রাতের অন্ধকারে এইভাবে প্রতিবাদে নামতে হয়েছে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, পৌষমেলার সময় ক্যাম্পাস সংলগ্ন অধিকাংশ বাজার বন্ধ থাকে। ফলে বাইরে থেকে খাবার জোগাড় করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তার উপর রাত সাড়ে ন'টার মধ্যে হস্টেলে ঢোকার ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এই অবস্থায় জেনারেল কিচেন বন্ধ থাকলে কার্যত না খেয়ে থাকার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন বহু ছাত্রী। 

তাঁদের আরও দাবি, শুধু খাবার বন্ধই নয়, যে দিনগুলোতে খাবার দেওয়া হয় সেদিনও বেশি মূল্য নেওয়া হলেও প্রায় নিয়মিতভাবেই নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়েও বারবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, এই বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও আচমকা পরিদর্শন বা কড়া নজরদারি হয় না। ফলে সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি। টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কুপন কাটার পরও খাবার না পাওয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বিক্ষোভ চলাকালীন ছাত্রীদের অভিযোগ, ওয়ার্ডেন ও অন্যান্য আধিকারিকরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বদলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এমনকী, মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করে ছাত্রীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ক্যাম্পাসে এই ধরনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এত বড় ঘটনার পরেও প্রশাসনের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। অন্যদিকে, আন্দোলনরত ছাত্রীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনেও এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল সংলগ্ন জেনারেল কিচেনগুলির খাবারের মান ও পরিষেবা নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ। এবার পৌষমেলার সময় আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল বলেই মত পড়ুয়াদের। 

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, আন্দোলনের বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।