আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাড় এমন একটা শক্ত জিনিস যা গোটা দেখের পেশির ওজন ধরে রাখে। অন্যদিকে কাচ মানেই যত্নের জিনিস। কিন্তু জানেন কি এবার কাচকেই হাড়ের বিকল্প হিসেবে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা? অবিশ্বাস্য মনে হলেও, চিনের একদল গবেষক এমনই এক বায়ো-অ্যাক্টিভ কাচ তৈরি করেছেন, যা দিয়ে থ্রি-ডি প্রিন্টিং সম্ভব এবং যা দৃঢ়তার দিক থেকে মানুষের হাড়ের অনেকটাই কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, জীবজন্তুর উপর পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই বিশেষ কাচ সাধারণ কাচের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে হাড়ের কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। শুধু হাড় নয় দাঁতের চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত সেরা প্রতিস্থাপন সামগ্রীর প্রায় সমান ফল দিয়েছে এই বিশেষ কাচ।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
কাচ এবং হাড়, উভয়ের মধ্যেই একটি বিশেষ মিল রয়েছে। তাদের আণবিক গঠনের কারণে দুটি উপাদানই বাইরের চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, কিন্তু টান পড়লে ততটা পারে না। কাচের মূল উপাদান হলো সিলিকা, যা তরল অবস্থায় থাকতে পারে এবং ইচ্ছামতো আকার দেওয়া যায়। এই গুণের কারণেই থ্রি-ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে শরীরের ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের মাপে নিখুঁতভাবে কৃত্রিম অংশ তৈরি করার দরজা খুলে গেল।
তবে সম্ভাবনা থাকলেও, এতদিন পর্যন্ত কাচের থ্রি-ডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়াটি ছিল একটি বড় বাধা। প্রচলিত পদ্ধতিতে কাচের থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের জন্য বিষাক্ত প্লাস্টিসাইজার এবং ২,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হতো। চিকিৎসাবিজ্ঞানে সুরক্ষা এবং খরচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ায় এই পদ্ধতি ব্যবহারের অযোগ্য ছিল।
চিনের গবেষক জিয়ানরু শিয়াও, তাও চেন এবং হুয়ানান ওয়াং-এর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী এই সমস্যার একটি পরিবেশবান্ধব সমাধান খুঁজে বের করেছেন। তাঁরা বিপরীত চার্জযুক্ত সিলিকা কণার সঙ্গে ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট আয়ন মিশিয়েছেন, যা কোষ গঠনে সাহায্য করে বলে পরিচিত। এই মিশ্রণটি একটি প্রিন্টযোগ্য জেল তৈরি করে, যা ১,৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ব্যবহার করা সম্ভব।
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সাফল্য হল, এর জন্য কোনও জৈব প্লাস্টিসাইজার বা অতিরিক্ত উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে অপরিহার্য ছিল। এর ফলে খরচ এবং সময় দুই-ই বাঁচে, কাচের জৈব-সক্রিয়তা বজায় থাকে এবং বিষাক্ত প্রভাবের ঝুঁকিও থাকে না। গবেষকদের দাবি, তাঁরা অজৈব ‘সেল্ফ-হিলিং কলোয়েডাল জেল’ ব্যবহার করেছেন, যা একে অপরকে বৈদ্যুতিকভাবে আকর্ষণ করে শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করতে পারে। এই জেলটির ‘কম্প্রেসিভ মডিউলাস’ প্রায় ২.৩ মেগাপাস্কাল, যা হাড়ের কাঠামো হিসাবে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
গবেষক দলটি খরগোশের খুলির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সারিয়ে তোলার জন্য তাঁদের তৈরি নতুন বায়ো-গ্লাস, সাধারণ সিলিকা গ্লাস এবং দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি বাণিজ্যিক হাড়ের বিকল্প সামগ্রীর মধ্যে তুলনা করেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, বাণিজ্যিক পণ্যটি শুরুতে দ্রুত কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করলেও, চিনের বিজ্ঞানীদের তৈরি বায়ো-গ্লাসটি ছিল অনেক বেশি টেকসই। আট সপ্তাহ পরে, অধিকাংশ হাড়ের কোষ বায়ো-গ্লাসটির কাঠামোর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল, যেখানে সাধারণ কাচের ক্ষেত্রে কোষের বৃদ্ধি প্রায় দেখাই যায়নি।
গবেষকরা তাঁদের গবেষণাপত্রে লিখেছেন, “এই ‘গ্রিন’ বা পরিবেশবান্ধব অজৈব থ্রি-ডি প্রিন্টিং কৌশলটি সাশ্রয়ী এবং জৈব-সক্রিয়তা বজায় রেখে বায়ো-গ্লাস ভিত্তিক হাড় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা জীবদেহে হাড়ের গঠন এবং দৃঢ়তা বাড়াতে সাহায্য করেছে।” তাঁরা আরও যোগ করেন যে, এই পদ্ধতি শুধুমাত্র দাঁতের চিকিৎসা বা হাড় প্রতিস্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে শক্তি শিল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
