আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে রোগগুলি নিঃশব্দে থাবা বসাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হল স্তন ক্যানসার। ভারতে, বিশেষত শহরাঞ্চলে, মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ২২ জন ভারতীয় মহিলার মধ্যে ১ জনের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু ভয়ের বিষয় হল, সামাজিক জড়তা, লজ্জা এবং সচেতনতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ নির্ণয়ে মারাত্মক দেরি হয়ে যায়। বিপদ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ নিরাময়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল প্রাথমিক পর্যায়েই তাকে চিহ্নিত করা। তাই মহিলাদের নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে পরিচিত এবং সাধারণ লক্ষণ হল স্তনে বা বগলের নীচে মাংসপিণ্ড বা কোনও ফোলা ভাব অনুভব করা। সাধারণত এই পিণ্ড বা ‘লাম্প’ প্রাথমিক অবস্থায় যন্ত্রণাহীন হয়। ফলে অনেকেই এটিকে সাধারণ সিস্ট বা ফোড়া ভেবে এড়িয়ে যান, যা মারাত্মক ভুল হতে পারে। ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই পিণ্ডগুলি সাধারণত শক্ত হয়। লাম্পগুলির ধার বা কিনারা অমসৃণ হয়। প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের পর, স্নানের সময় বা শোওয়ার আগে নিয়ম করে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা বা ‘সেল্ফ এগজামিনেশন’ করলে এই ধরনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন সহজেই নজরে আসতে পারে। স্তন এবং বগলের নীচের অংশ ছাড়াও কণ্ঠহাড়ের (কলার বোন) কাছের জায়গাও পরীক্ষা করা উচিত। যে কোনও ধরনের নতুন পিণ্ড, তা আকারে যতই ছোট হোক, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
শুধুমাত্র মাংসপিণ্ডই নয়, আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলি বিপদের সঙ্কেত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্তনের ত্বক এবং আকৃতির পরিবর্তন। যদি স্তনের চামড়ায় টোল পড়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা কমলালেবুর খোসার মতো ছিদ্রযুক্ত ও খসখসে ভাব দেখা যায়, তবে তা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ‘পিউ ডি’অরেঞ্জ’ বলা হয়, এটি লসিকা নালীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। স্তনের কোনও অংশে লালচে ভাব, ফোলা ভাব, চুলকানি বা র্যাশ দেখা দিলেও সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় ‘ইনফ্ল্যামেটরি ব্রেস্ট ক্যানসার’-এর ক্ষেত্রে কোনও পিণ্ড থাকে না, বরং স্তনটি লাল, ফোলা এবং গরম অনুভূত হয়।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল স্তনবৃন্ত বা নিপলের পরিবর্তন। যদি স্তনবৃন্ত যা স্বাভাবিকভাবেই বাইরের দিকে থাকে, তা হঠাৎ ভিতরের দিকে ঢুকে যায় (ইনভার্টেড নিপল), তার অবস্থান থেকে সরে যায় বা আকৃতির কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ে, তবে তা ক্যানসারের সঙ্কেত হতে পারে। স্তনবৃন্ত থেকে নিজে থেকেই রক্ত, স্বচ্ছ রস বা অন্য কোনও ধরনের তরল নিঃসৃত হওয়াও একটি গুরুতর লক্ষণ, বিশেষত যদি একটি স্তন থেকেই এই ক্ষরণ হয়। স্তনবৃন্তের চারপাশে চামড়া ওঠা, ঘা বা একজিমার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও তা উপেক্ষা করা অনুচিত।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, এই লক্ষণগুলির কোনও একটি দেখা দেওয়ার অর্থই ক্যানসার হয়েছে, এমনটা ধরে নেওয়ার কারণ নেই। স্তনের বিভিন্ন নিরীহ রোগ, যেমন ফাইব্রোসিস্টিক পরিবর্তন বা সংক্রমণের ফলেও এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিন্তু ঝুঁকি না নিয়ে, ভয় বা লজ্জায় সময় নষ্ট না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটাই বুদ্ধির কাজ। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ম্যামোগ্রাম করানো অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে স্তন ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। তাই নিজের শরীরের প্রতি উদাসীন না হয়ে, সচেতনতাই হোক প্রতিরোধের প্রথম এবং প্রধান ধাপ।
