আজকাল ওয়েবডেস্ক: গরমের দুপুরে স্বস্তি পেতে বা বাড়ির ক্ষুদে সদস্যদের মন ভাল করতে আইসক্রিমের জুড়ি মেলা ভার। অনেক সময়ই ঠান্ডা লাগবে বা দাঁতের ক্ষতি হবে এই ভেবে বাবা মা শিশুদের আইসক্রিম খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু জানেন কি, এই আইসক্রিমই আপনার হৃদযন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও, সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণার সমন্বিত ফলাফল এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিমিত পরিমাণে আইসক্রিম খেলে তা শুধু রসনার তৃপ্তিই করে না, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
দশ বছর ধরে ২,৪০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর চালানো একটি ডাবল-ব্লাইন্ড ট্রায়ালের ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা সপ্তাহে অন্তত দু’বার আইসক্রিম খান, তাঁদের মধ্যে করোনারি ইভেন্ট বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আইসক্রিম না খাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম। এই চাঞ্চল্যকর তথ্যের নেপথ্যে একাধিক জৈব-রাসায়নিক কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকদের মতে, এর নেপথ্যের অন্যতম কারণ হল আইসক্রিমের মূল উপাদান দুধ। দুধে থাকা কিছু বিশেষ ‘বায়োঅ্যাকটিভ পেপটাইড’ হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। দুধে কেসিন নামক একধরনের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন থেকে প্রাপ্ত পেপটাইডগুলি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল-এর জারণ প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, এটি ভাল কোলেস্টেরল-এর মাত্রা প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
এর পাশাপাশি, আইসক্রিমে থাকা প্রোবায়োটিকস বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া রক্তনালীর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উপকারী জীবাণুগুলি শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীর প্রসারণ ঘটিয়ে শিরা উপশিরা এবং ধমনীগুলিকে আরও নমনীয় করে তোলে, ডাক্তারি পরিভাষায় বিষয়টিকে বলা হয় ‘ভ্যাসোডায়ালেশন’। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে রক্তচাপের উপর। সিস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস পায়, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
শুনতে অবাক লাগলেও যে ঠান্ডার ভয়ে অনেকে আইসক্রিম খান না, আইসক্রিমের সেই শীতলতাও শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঠান্ডা খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি খরচ করে সেটিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে ‘কোল্ড-ইনডিউসড থার্মোজেনেসিস’ বলা হয়। এর ফলে দেহের বিপাক হার প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই সামান্য বৃদ্ধিও দীর্ঘমেয়াদে শরীরের সার্বিক সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সর্বোপরি, আইসক্রিম হল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন এ, ডি, ও কে২-এর মতো জরুরি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের একটি চমৎকার উৎস। এই সমস্ত উপাদানগুলির সম্মিলিত প্রভাবে শরীরের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন কমে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের রক্তে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন-এর মাত্রা ১২ শতাংশ কমতে দেখা গিয়েছে, যা প্রদাহ কমার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।
তবে গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এর অর্থ এই নয় যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করতে হবে। আইসক্রিমের ধরন, তাতে ব্যবহৃত চিনির পরিমাণ এবং পরিমিতিবোধ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংযমের সঙ্গে সঠিক মানের আইসক্রিমকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে তা সত্যিই হৃদযন্ত্রের উপকার করতে পারে, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে বা আইসক্রিমের নামে বিক্রি হওয়া ফ্রোজেন ডেজার্ট খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
