আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটা সময় ছিল, যখন ডায়াবেটিসকে ‘বয়স্কদের রোগ’ বলে মনে করা হত। আজ তার রূপ একেবারে পাল্টে গিয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামে পরিচিত এই ব্যাধি এখন ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের ঘরে ঘরে। সম্প্রতি আইসিএমআর-এর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ১০ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১১.৪ শতাংশ। এর সঙ্গে সঙ্গে আরও ১৫.৩ শতাংশ মানুষ প্রি-ডায়াবেটিক। অর্থাৎ যে কোনও সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।
‘প্রতিটি তিনজনের মধ্যে একজন জানেনই না, তাঁর ডায়াবেটিস আছে’
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভারতে বহু মানুষ জানেনই না যে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ফলে রোগ ধরা পড়তে এবং চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে যায়, জটিলতা বাড়ে। আর এটি এমন এক রোগ যার প্রভাবে হৃদযন্ত্র, কিডনি, চোখজ স্নায়ু, প্রায় প্রতিটি অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ধীরে ধীরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে ডায়াবেটিস এখন এক ‘গ্লোবাল এপিডেমিক’। আর ভারত এই মহামারীর রাজধানী। তাই সময় থাকতে রোগনির্ণয় করা এবং চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিস প্রথম দিকে অনেক সময় শরীরের এমন একটি জায়গায় আক্রমণ করে, যাকে আমরা প্রায়ই অবহেলা করি- পা।
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
কেন পায়ে প্রভাব ফেলে ডায়াবেটিস?
ডায়াবেটিস মানে শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়া। দীর্ঘ দিন এই অবস্থা চললে তা স্নায়ু ও রক্তনালিগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শরীরের সবচেয়ে দূরবর্তী বা প্রান্তিক অংশ হল পা। তাই এই অঙ্গটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’। যদি সময়মতো ধরা না পড়ে, তাহলে পরিণতি হতে পারে গুরুতর। আঙুল পচে যাওয়া, ঘা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি অঙ্গচ্ছেদ পর্যন্ত করতে হতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা যায় পায়ে?
অসাড়তা ও চিমটি কাটার মতো অনুভূতি: পায়ের পাতা আচমকা অবশ লাগা, মাঝে মাঝেই চিমটি কাটার মতো ঝিনঝিনে অনুভূতি হওয়ার মতো উপসর্গ স্নায়ুপ্রদাহের প্রাথমিক লক্ষণ।
জ্বালাভাব ও ব্যথা: রাতে পা জ্বালা করে? বিশেষ করে পায়ের তালুতে আগুন লাগার মতো অনুভূতি হয়? রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে তার প্রভাবে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
পায়ের ত্বকে পরিবর্তন: পায়ের ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে যাওয়া, পায়ের লোম পড়ে যাওয়া, এমনকি পায়ের চামড়ায় রঙের তারতম্য হওয়া ডায়াবেটিসের লক্ষণ। আসলে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হওয়ার কারণে এগুলি হয়।
জখম সারতে দেরি হওয়া: পায়ের খুব সামান্য ছোট্ট কাটাছেঁড়া যদি দীর্ঘ দিন কাঁচা থাকে বা সহজে না শুকোয়, তা হলে অবিলম্বে সতর্ক হোন। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এবং ক্ষত কিছুতেই সারতে চায় না। একে ডায়াবেটিক ফুট বলে।
পায়ে ব্যথা বা ভারী লাগা হাঁটার সময়: সাধারণত হাঁটাচলার সময় পায়ে ব্যথা হওয়া কিংবা পা ভারী লাগাকে আমরা ক্লান্তি বলে চালিয়ে দিই। কিন্তু এটি ডায়াবেটিক পারিফেরাল আর্টারি ডিজিজের পূর্ব লক্ষণ ।
পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া: রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে পা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে। বিশেষ করে এক পা অপরটির তুলনায় বেশি ঠান্ডা হলে সতর্ক হওয়া জরুরি।
কীভাবে রক্ষা পাবেন?
১. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করান
২. নিয়মিত পায়ের যত্ন নিন। দৈনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, পরিষ্কার মোজা পরুন
৩. কখনও খালি পায়ে হাঁটবেন না, এমনকি ঘরেও নয়, চাইলে নরম চটি ব্যবহার করতে পারেন।
৪. পায়ে সামান্য কেটে গেলেই বা ঘা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
