আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের হার গত কয়েক দশকে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তবুও, তুলনামূলকভাবে কম দেখা যাওয়ায় এ বয়সীদের নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এবার মার্কিন গবেষকরা চারটি সতর্কবার্তা চিহ্নিত করেছেন, যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা—
পেটের ব্যথা
মলদ্বার থেকে রক্তপাত
ডায়রিয়া
আয়রনের ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ড. ইয়িন কাও-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, এসব লক্ষণের যেকোনো একটি দেখা দিলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়। তিন বা ততোধিক লক্ষণ থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায় ছয় গুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস, লাল মাংস, অতিরিক্ত চিনি ও কম আঁশযুক্ত খাবার এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিপরীতে, শাকসবজি, ফল, ডাল, পূর্ণ শস্য এবং পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়ক। নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান, অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত রাখা এবং তেল-চর্বি কম খাওয়া জরুরি। পাশাপাশি, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। তরুণ প্রজন্মের ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড নির্ভরতা কমিয়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: ঘন তাজা দুধের মজা! দুধের ঘনত্বেই লুকিয়ে আছে অদ্ভুত টান? গবেষণায় মিলল আসল চিত্র
গবেষণার পদ্ধতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ কোটি ৩০ লাখ প্রাপ্তবয়স্কের স্বাস্থ্যবিমা দাবি-সংক্রান্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ১৮-৪৯ বছর বয়সী ৫,০৭৫ জন কোলোরেক্টাল ক্যান্সার রোগী এবং ২২,৩৭৮ জন সুস্থ ব্যক্তিকে তুলনা করেছেন। দেখা গেছে, রোগ নির্ণয়ের আগে ৩ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ রোগীর অন্তত একটি সতর্কবার্তা ছিল। এর মধ্যে পেটের ব্যথা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে (১১.৬%), তবে মলদ্বার থেকে রক্তপাত ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত।
বিলম্বে রোগ ধরা পড়ার বিপদ
অনেক সময় সতর্কবার্তা দেখা দেওয়ার পরও রোগ নির্ণয়ে গড়ে ৯.৭ মাস পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে। এমনকি তিন বা ততোধিক লক্ষণ থাকা রোগীদের ক্ষেত্রেও গড়ে ৪.৮ মাস বিলম্ব হয়েছে। ফলে রোগ প্রায়ই অগ্রসর পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে ৫ বছরের বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ১৪%। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ৯০%।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ড. কাও সতর্ক করেছেন—যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, বিশেষ করে যদি বারবার হয় বা না সারে, তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রয়োজনে প্রাইমারি কেয়ার ডাক্তার গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্টের কাছে পাঠাতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে বাড়িতে বসেই মল পরীক্ষা করে স্ক্রিনিং করা সম্ভব। গবেষকরা মনে করছেন, এই সতর্কবার্তাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার অনেক আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে, যা জীবন বাঁচাতে এবং চিকিৎসার জটিলতা কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
