আজকাল ওয়েবডেস্ক:  এক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় অবশেষে জানা গেল, হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য কোন দুধ বেশি নিরাপদ—পূর্ণ-চর্বিযুক্ত নাকি কম-চর্বিযুক্ত। নরওয়ের গবেষকরা প্রায় ৩৩ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধের তুলনায় কম-চর্বিযুক্ত দুধ পানকারীদের হৃদ্‌রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।

গবেষণার পদ্ধতি ও পরিসর
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ। এতে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে হওয়া তিনটি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য-পরীক্ষার ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে। নরওয়ের ৭৩,৮৬০ জন অংশগ্রহণকারীর (গড় বয়স ৪১ বছর) স্বাস্থ্যতথ্য ৩৩ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই সময়ে ২৬,৩৯৩ জন মারা যান, যাদের মধ্যে ৮,৫৯০ জনের মৃত্যু হয় হৃদ্‌রোগে।

দুধের চর্বি ও মৃত্যুঝুঁকি
বিশ্লেষণে দেখা যায়, পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধপানকারীদের মৃত্যুঝুঁকি কম-চর্বিযুক্ত দুধপানকারীদের তুলনায় বেশি। যারা সর্বাধিক দুধ পান করতেন, তাদের ক্ষেত্রে সব ধরনের মৃত্যুর ঝুঁকি ২২% এবং হৃদ্‌রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি ১২% বেশি ছিল তুলনায় যারা সর্বনিম্ন দুধ পান করতেন।

আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে গবেষকরা দেখেন—পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধই মৃত্যুঝুঁকির মূল কারণ হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে। পরিমাণের প্রভাব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দুধের ধরন বিবেচনায় আনা হলে দেখা যায়, কম-চর্বিযুক্ত দুধপানকারীদের সব ধরনের মৃত্যুঝুঁকি ১১% এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ৭% কম ছিল পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধপানকারীদের তুলনায়।

আরও পড়ুন: ময়ূরের সঙ্গে মুরগির সঙ্গম! সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওর পেছনের আসল সত্য

সামাজিক ও জীবনযাত্রার প্রভাব
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক—কম-চর্বিযুক্ত দুধপানকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি, তারা সাধারণত উচ্চশিক্ষিত এবং ধূমপান করেন না। অন্যদিকে, পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধপানকারীদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার তুলনামূলক বেশি।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৭০-এর দশকে নরওয়েতে অধিকাংশ মানুষ পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধ পান করতেন। তবে ১৯৮০-এর দশকে কম-চর্বিযুক্ত দুধের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তন গবেষকদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ তৈরি করে—দীর্ঘমেয়াদে দুই ধরনের দুধের প্রভাব তুলনা করার।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত
গবেষকরা উপসংহারে লিখেছেন, “দুধ সেবন ও হৃদ্‌রোগজনিত এবং সর্বমোট মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক দুধের প্রকারভেদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে। পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধে মৃত্যুঝুঁকি ইতিবাচক (বৃদ্ধি) হলেও, কম-চর্বিযুক্ত দুধে হৃদ্‌রোগ ও সর্বমোট মৃত্যুর ঝুঁকিতে সামান্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।”

বর্তমান স্বাস্থ্য নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল
এই ফলাফল যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS)-এর বর্তমান পরামর্শের সঙ্গেও মেলে। এনএইচএস জানায়, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের অধিকাংশ চর্বি স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি এবং রক্তে কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে—এতে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।