আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমান সমাজে যৌনবাহিত রোগ বা এসটিডি (Sexually Transmitted Disease) নিয়ে সচেতনতা বাড়লেও অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রকৃত ঝুঁকি ও প্রতিরোধের বিষয়ে মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অসতর্ক যৌন অভ্যাসের ফলে সবচেয়ে বেশি যে রোগগুলোর সংক্রমণ ঘটে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হারপিস।

হারপিস কী?

চিকিৎসকরা বলছেন, জেনিটাল হারপিস হল একটি এসটিডি যা মূলত হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ–১ (HSV-1) এবং টাইপ–২ (HSV-2) দ্বারা সৃষ্ট। রোগটি প্রধানত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ালেও, আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, লালা কিংবা ত্বকের সংস্পর্শ থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। ফলে এটি শুধু যৌন জীবনের ঝুঁকি নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং পারিবারিক জীবনের ক্ষেত্রেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

সংক্রমণের পথ

চিকিৎসক মহলের বক্তব্য অনুযায়ী, হারপিস ছড়ায় নানা উপায়ে—
১. কারো শরীরে যদি সক্রিয় হারপিসের ঘা বা কালশিটে থাকে এবং তার সঙ্গে যৌন সংসর্গ ঘটে।
২. মুখে হারপিস থাকলে, লালা বিনিময়ের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে।
৩. যৌনাঙ্গে সংক্রমিত তরলের আদান-প্রদানের মাধ্যমেও এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।
৪. আক্রান্ত ত্বক বা সংক্রমিত যৌনাঙ্গের চামড়ার সরাসরি সংস্পর্শ এড়ানো না হলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি প্রবল।

আরও পড়ুন: গরমে অণ্ডকোষের 'রোলার কোস্টার'! তপ্ত দিনে গোপনাঙ্গ পেন্ডুলামের মতো ঝুলে যাওয়ার বিরল আতঙ্কে জেরবার পুরুষরা

চিকিৎসকরা আরও সতর্ক করেছেন, অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির দৃশ্যমান কোনো ঘা থাকে না, অথবা তিনি নিজেই জানেন না যে তার শরীরে ভাইরাসটি আছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও যৌন সংসর্গের মাধ্যমে রোগটি সঙ্গীর শরীরে ছড়াতে পারে। বিশেষ করে যদি কেউ ওরাল হারপিসে আক্রান্ত হন এবং ওরাল সেক্স করেন, তবে অপর সঙ্গীর যৌনাঙ্গে হারপিসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

উপসর্গ ও জটিলতা

হারপিসের প্রধান লক্ষণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন যৌনাঙ্গে বা মুখে ব্যথাযুক্ত ফোস্কা, ঘা, জ্বালা এবং চুলকানি। অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণ ধরা পড়ে দেরিতে, কারণ প্রথম অবস্থায় লক্ষণগুলি হালকা থাকে এবং রোগীরা তা অবহেলা করেন। একবার ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে এটি স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, অবহেলা করলে হারপিস শুধু ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও বড়সড় প্রভাব ফেলে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ হিসেবে এটি দাম্পত্য জীবনে ভাঙন, সামাজিক সংকোচ এবং আত্মসম্মানবোধে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হারপিস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিরাপদ যৌন অভ্যাস গড়ে তোলা। কনডম ব্যবহার, যৌন সঙ্গী সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া, এবং একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত যৌন সংসর্গ এড়ানোই এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। তাছাড়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি কেউ মনে করেন যে তিনি হারপিসে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বর্তমানে এ রোগের পূর্ণ চিকিৎসা না থাকলেও নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং পুনরাবৃত্তি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। হারপিস নিয়ে সামাজিক ট্যাবু এবং সংকোচ এখনো প্রবল। কিন্তু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগটিকে লুকিয়ে রাখার পরিবর্তে সচেতনতা, নিরাপদ যৌন আচরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই একমাত্র সুরক্ষা। যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা ও শিক্ষাই সমাজকে নিরাপদ রাখতে পারে।