আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইতিহাসের পাতা ওল্টালে এমন কিছু মানুষের সন্ধান মেলে, যাঁদের জীবন রূপকথাকেও হার মানায়। তেমনই এক বিস্ময়কর ব্যক্তি ফ্র্যাঙ্ক লেন্টিনি। জন্ম থেকেই তাঁর তিনটি পা, চারটি পায়ের পাতা এবং দুইটি যৌনাঙ্গ ছিল শরীরে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে তিনি ছিলেন এক জীবন্ত বিস্ময়, জেনেটিক জটিলতার এক চলমান উদাহরণ। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক লেন্টিনি কেবল তাঁর অস্বাভাবিক শারীরিক গঠনের জন্যই বিখ্যাত হননি। তিনি পরিচিত তাঁর ইস্পাতকঠিন মানসিকতা, অসাধারণ আত্মবিশ্বাস এবং মঞ্চ কাঁপানো বাগ্মিতার জন্যও।
লেন্টিনির জন্ম ১৮৮৯ সালের ১৮ মে। ইতালির সিসিলি দ্বীপের রোজলিনি শহরে। জন্মের পরেই তাঁর শারীরিক গঠন দেখে চিকিৎসকেরা স্তম্ভিত হয়ে যান। সদ্যোজাত ফ্র্যাঙ্কের শরীরে ছিল তিনটি পূর্ণাঙ্গ পা, চারটি পায়ের পাতা, মোট ১৬টি আঙুল এবং দুইটি সম্পূর্ণ যৌনাঙ্গ।
সেই সময় চিকিৎসকরা এহেন দেহের ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, পরবর্তীকালে বোঝা যায়, লেন্টিনির অবস্থাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘প্যারাসাইটিক টুইন’। মাতৃগর্ভে তাঁর সঙ্গেই জন্ম হয় এক যমজ ভাই-এর। কিন্তু সেই ভ্রূণের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হয়নি। অপূর্ণাঙ্গ ভ্রূণের দেহাংশ ফ্র্যাঙ্কের শরীরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
এই বিরল শারীরিক গঠনের কারণে শৈশব ছিল যন্ত্রণাময়। সেই সময় তাঁকে কখনও ‘রাক্ষস’, কখনও বা ‘ঈশ্বরের অভিশাপ’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। মাত্র আট বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি দেন আমেরিকায়। আর সেখানেই যেন তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। বাফেলো বিলস ওয়াইল্ড ওয়েস্ট শো-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত সার্কাসে অংশ নেন তিনি। হয়ে ওঠেন ‘দ্য গ্রেট লেন্টিনি’।
তাঁর পারফরম্যান্স ছিল তাক লাগানো। অবলীলায় তিন পায়ে ভর দিয়ে ফুটবল খেলতেন, দৌড়তেন, সাইকেল চালাতেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে রসিকতা করতেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস ও মনোগ্রাহী উপস্থাপনা মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত।
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
শারীরিক গঠন নিয়ে যতই অসুবিধা থাক, লেন্টিনির ব্যক্তিগত জীবন ছিল আর পাঁচটা ‘স্বাভাবিক’ মানুষের মতোই। তিনি থেরেসা মুর নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁদের সংসারে আসে চারটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান। তিনি প্রমাণ করে দেন, ভালবাসা এবং একটি পরিপূর্ণ পারিবারিক জীবন কাটাতে শারীরিক গঠন কোনও বাধাই নয়।
ফ্র্যাঙ্ক লেন্টিনি ৭৭ বছর বয়সে, ১৯৬৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শরীর নিয়ে যখন চারদিকে এত মানুষ হীনম্মন্যতায় ভোগেন সেখানে ফ্র্যাঙ্ক লেন্টিনি ব্যক্তিক্রমী। তিনটি পা নিয়ে জন্মেও তিনি আত্মবিশ্বাসে, মননে এবং দৃঢ়তায় ভরপুর একজন মানুষ।
