আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজ্ঞানের দৌলতে যেন আর কিছুই অসাধ্য নেই মানুষের। বুকের ভিতর ধুকপুক করছে টাইটানিয়ামের তৈরি এক যন্ত্র। রক্তমাংসের হৃদপিণ্ড নয়, কিন্তু নিখাদ প্রযুক্তির জোরে একেবারে হৃদপিণ্ডের কাজ করছে যন্ত্রটি। আর সেই যন্ত্র বুকে নিয়েই এক দিন, দু’দিন করে টানা ১০০টা দিন পার করে ফেললেন বছর চল্লিশের এক অস্ট্রেলীয় যুবক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।
অবশেষে মিলল আসল হৃদপিণ্ড। কিন্তু এই ১০০ দিনে টাইটানিয়ামের কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডই হয়ে উঠেছিল তাঁর জীবনের একমাত্র অবলম্বন। সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালের এই সাফল্য গোটা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ডিজে নামে পরিচিত বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। মরণাপন্ন অবস্থায় হার্ট ফেলিওর নিয়ে তিনি সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন ছাড়া বাঁচার আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু দাতা হৃদপিণ্ড পাওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! যত সময় যাচ্ছিল, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছিল রোগীর জীবনের আশা।
ঠিক এই সময়েই চিকিৎসকেরা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। সাময়িক ভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁর শরীরে বসানো হয় একটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম হৃদযন্ত্র। যন্ত্রটির নাম ‘বাইভেকর টোটাল আর্টিফিশিয়াল হার্ট’। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বায়োইঞ্জিনিয়ার ডঃ ড্যানিয়েল টিমসের ২০ বছরের গবেষণার ফসল এই যন্ত্র। টাইটানিয়ামের হালকা অথচ মজবুত কাঠামোয় তৈরি এই যন্ত্রের ভিতরে রয়েছে একটি মাত্র ঘূর্ণায়মান চাকতি, যা চুম্বকের সাহায্যে ভেসে থাকে এবং রক্ত পাম্প করতে থাকে। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি যেমন কম, তেমনই যন্ত্রের আয়ুও অনেক বেশি।
গত বছরের শেষের দিকে সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডিজের অকেজো হৃদপিণ্ড সরিয়ে তার জায়গায় অত্যাধুনিক এই যন্ত্রটি বসান। সেই যন্ত্রকে সঙ্গী করেই ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন ডিজে। শুধু হাসপাতালেই নয়, ১০০ দিনের মাথায় বিশ্বের প্রথম রোগী হিসাবে তিনি এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড নিয়েই বাড়ি ফেরার অনুমতি পান। রীতিমতো নিজের পায়ে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি।
ডিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রথম দিকে অদ্ভুত লাগত। নিজের বুকের ধুকপুকুনি শুনতে পেতাম না, তার বদলে একটা গুনগুন আওয়াজ হত। কিন্তু এই যন্ত্রটাই আমাকে আমার পরিবারের সঙ্গে আরও কিছুদিন থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।”
অবশেষে ১০০ দিন পর তাঁর প্রতীক্ষার অবসান হয়। মার্চ মাসে এক উপযুক্ত দাতার হৃদপিণ্ড পাওয়া যায়। ফের অস্ত্রোপচার হয় ডিজের। এ বার টাইটানিয়ামের যন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে তাঁর বুকে বসানো হয় রক্তমাংসের আসল হৃদপিণ্ড। সেই প্রতিস্থাপনও সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।
সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। যে সব রোগী হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকেন, তাঁদের জন্য এই ‘ব্রিজ-টু-ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ প্রযুক্তি আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।
