আজকাল ওয়েবডেস্ক: রূপচর্চার নামে না জেনে বিভিন্ন ধাতু বা খনিজ পদার্থ গ্রহণ ডেকে আনতে পারে বড় ধরনের বিপদ। বিশেষ করে দেখা দিতে পারে গুরুতর চর্মরোগ। তেমনই এক বিরল অথচ স্থায়ী চর্মরোগ হল ‘আর্জিরিয়া’। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক ধীরে ধীরে নীল বা ধূসর-নীল বর্ণ ধারণ করে, যা এক স্থায়ী পরিবর্তন। মূলত শরীরে রূপা বা তার কোনও যৌগ অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে এই রোগ দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, আর্জিরিয়া প্রাণঘাতী না হলেও, এটি আক্রান্তের মানসিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

আর্জিরিয়ার প্রধান কারণ হল চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ‘কলয়েডাল সিলভার’ নামক রূপাযুক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ। অনেকেই এর কথিত স্বাস্থ্য উপকারিতার লোভে এটি সেবন করেন, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখনও প্রমাণিত নয়। এছাড়া, রূপার খনি, গয়না শিল্প বা ফটোগ্রাফি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘ সময় ধরে রূপার সংস্পর্শে এলেও এই রোগের শিকার হতে পারেন। কিছু পুরনো ঔষধপত্র বা ক্ষতস্থানে ব্যবহৃত রূপার যৌগ থেকেও আর্জিরিয়া হওয়ার নজির রয়েছে।

এই রোগের লক্ষণ প্রথমে হালকাভাবে শুরু হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষত সূর্যরশ্মির প্রভাবে, ত্বকের রঙ আরও গাঢ় ও স্পষ্ট হতে থাকে। মুখমণ্ডল, ঘাড়, হাত এবং নখের মতো অংশে এই পরিবর্তন বেশি দেখা যায়। অনেক সময় মাড়ি ও চোখের শ্লেষ্মা ঝিল্লিও বিবর্ণ হয়ে পড়ে।

রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীর পূর্ব ইতিহাস এবং শারীরিক লক্ষণকে গুরুত্ব দেন। ত্বকের বায়োপসির মাধ্যমেও শরীরে রূপার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। উদ্বেগজনক বিষয় হল, এখনও পর্যন্ত আর্জিরিয়ার কোনও সুনির্দিষ্ট ও সম্পূর্ণ কার্যকরী চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। লেজার থেরাপির মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে বিবর্ণতা সামান্য কমানো গেলেও, তা ত্বকের স্বাভাবিক রঙ পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে পারে না। যেহেতু এই রোগের ফলে ত্বকের রঙের পরিবর্তন স্থায়ী, তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। কোনও প্রকার রূপাযুক্ত ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং অজানা ধাতব পদার্থের দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই আর্জিরিয়ার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত থাকার চাবিকাঠি।