পৃথিবীকে ঘিরছে সৌরঝড়ের বিকিরণ বলয়, চিন্তায় বিজ্ঞানীরা

img

একটি ছোট কিউবস্যাট পৃথিবীর চারপাশে নতুন এক বিকিরণ বলয় আবিষ্কার করেছে। একটি তীব্র সৌরঝড়ের পর উপগ্রহটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে নতুন কাঠামো শনাক্ত করে, যা পরিচিত ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয়গুলোর বাইরেও নতুন স্তর যোগ করেছে।

img

পৃথিবীকে ঘিরে থাকা এই স্থায়ী বিকিরণ বলয়গুলো মূলত সূর্য ও মহাজাগতিক কণার আঘাত থেকে পৃথিবীকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এবার তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে দুটি অস্থায়ী বলয় — একটিতে ইলেকট্রন এবং অন্যটিতে প্রোটনের আধিক্য, যা আগে এই অঞ্চলে একসাথে দেখা যায়নি।

img

২০২৪ সালের ১০ মে, পৃথিবী আঘাত পায় একটি জি৫ মাত্রার সৌরঝড়ে। এই ঝড় প্রচুর শক্তি ও কণা পৃথিবীর কাছাকাছি মহাকাশে ঠেলে দেয়, ফলে চৌম্বক ক্ষেত্রের স্বাভাবিক বিন্যাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আকাশে অস্বাভাবিক উজ্জ্বল অরোরা দেখা যায়, স্যাটেলাইট ও ন্যাভিগেশন ব্যবস্থায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটে।

img

নাসার “কলোরাডো ইননার রেডিয়েশন বেল্ট এক্সপেরিমেন্ট” নামের ক্ষুদ্র উপগ্রহটি ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল নীরব হয়ে যায় এবং ১৫ জুন হঠাৎ পুনরায় সক্রিয় হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, এটি পৃথিবীর চারপাশে এক সম্পূর্ণ নতুন ইলেকট্রন বলয় শনাক্ত করেছে যা অন্য কোনও উপগ্রহ ধরা পড়েনি।

img

উপগ্রহটির প্রধান যন্ত্র কয়েক মিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্ট শক্তির দ্রুতগামী ইলেকট্রন শনাক্ত করে, যা পৃথিবীর কাছাকাছি একটি অঞ্চলে ঘনভাবে জমা ছিল। পাশাপাশি, নিকটবর্তী স্থানে উচ্চ-শক্তির প্রোটনও রেকর্ড করা হয়, যা দুটি স্বতন্ত্র বলয় গঠনের প্রমাণ দেয়।

img

এই বলয়গুলো পৃথিবী থেকে কয়েকটি পৃথিবী-ব্যাসার্ধ দূরে, এমন অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল যা সাধারণত তুলনামূলকভাবে ফাঁকা থাকে। যদিও অতীতেও কিছু ঝড়ের পর অস্থায়ী বলয় দেখা গেছে, তবে এবার প্রোটন-সমৃদ্ধ বলয় ছিল বিরল।

img

ইলেকট্রন বলয়ের প্রবাহ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী ছিল, তবে জুনের শেষ ও আগস্টের ঝড়ের পর তা দুর্বল হয়ে যায়। বিপরীতে, প্রোটন বলয়টি তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল, যা পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে—প্রোটন ধীরে ক্ষয় হয়, আর ইলেকট্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

img

সাধারণত অভ্যন্তরীণ বলয় পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,০০০–৮,০০০ মাইল উঁচুতে এবং বাইরের বলয় ১২,০০০–২৫,০০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মে মাসের ঝড়ের পর নতুন বলয়গুলো এই দুটির মাঝখানে তৈরি হয়—যে অঞ্চল সাধারণত নিরাপদ ধরা হয়।

img

এই আবিষ্কার কেবল নতুন বিকিরণ কাঠামোই নয়, মহাকাশযানের সুরক্ষা পরিকল্পনাতেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করল। ছোট হলেও উপগ্রহ প্রমাণ করল — সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে থাকলে ক্ষুদ্র মিশনও মহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এনে দিতে পারে।