চীন এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সোনার বাজারে বহুদিনের প্রচলিত কর ছাড়ের সুবিধা তুলে নিচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বর্ণভোক্তা দেশ চীনে এই পরিবর্তন ভোক্তা এবং খুচরো বিক্রেতা উভয়ের ওপরই সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
2
10
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে সোনা বিক্রেতারা আর শাংহাই গোল্ড এক্সচেঞ্জ থেকে কেনা সোনা বিক্রির সময় ভ্যালু-অ্যাডেড ট্যাক্স বা মূল্য সংযোজন কর সমন্বয় করতে পারবেন না। অর্থাৎ, তারা সোনা সরাসরি বিক্রি করুন কিংবা প্রক্রিয়াজাত করে অলংকার বা অন্যান্য পণ্য হিসেবে বিক্রি করুন—সব ক্ষেত্রেই কর পরিশোধ করতে হবে।
3
10
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, এটি কেবল বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পণ্য—যেমন বিশুদ্ধ সোনার বার, ইনগট বা পিপলস ব্যাংক অব চায়না অনুমোদিত সোনার মুদ্রা—এর ওপরই নয়, বরং অলংকার ও শিল্প ব্যবহারের স্বর্ণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
4
10
অর্থনীতিবিদদের মতে, চীনের এই পদক্ষেপ মূলত সরকারি রাজস্ব বাড়ানোর প্রচেষ্টা। দেশের দুর্বল সম্পত্তি বাজার ও মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে সরকারি রাজস্বে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সেই শূন্যতা পূরণের একটি উপায় হিসেবেই এই কর ছাড় তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং।
5
10
তবে এর ফল ভোক্তাদের জন্য সুখকর নয়। নতুন নিয়মের ফলে খুচরো বিক্রেতারা অতিরিক্ত করভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন, যার ফলে সোনা কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। চীনে সোনা কেনার আগ্রহ যেখানে ঐতিহ্য, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ—তিনেরই সমন্বয়, সেখানে এই পরিবর্তন খুচরো বাজারে কিছুটা ধাক্কা আনতে পারে।
6
10
বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দাম এক রেকর্ড-ব্রেকিং উত্থান দেখেছে। খুচরো বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক কেনাকাটার জোয়ারে সোনার দাম অক্টোবরের শুরুতে ৪,০০০ ডলার প্রতি আউন্সের গণ্ডি ছুঁয়েছিল। তবে বাজার এখন কিছুটা অতিমূল্যায়িত অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যা দ্রুত সংশোধনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
7
10
এদিকে, গত এক দশকের মধ্যে সোনার সবচেয়ে বড় পতনও ঘটেছে সম্প্রতি। মে মাসের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলা এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড বিনিয়োগের ধারা হঠাৎ থেমে যাওয়ায় বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের উৎসবমুখী চাহিদার অবসান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–চীনের মধ্যে বাণিজ্য সমঝোতা, যা সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরে রাখার আকর্ষণ কিছুটা কমিয়েছে।
8
10
যদিও সাম্প্রতিক অস্থিরতায় বাজার কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে, তবুও সোনা এখনও শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। ৪,০০০ ডলারের কাছাকাছি দামে স্থিতিশীল থাকা সোনার পেছনে কাজ করছে কিছু মূল কারণ—বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক সোনা ক্রয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সুদের হার হ্রাস, এবং চলতি বিশ্বের অনিশ্চয়তা।
9
10
বিশ্লেষকদের মতে, এসব কারণের সমন্বয়ে সোনা এখনো নিরাপদ সম্পদ হিসেবে আকর্ষণীয়। তবে চীনের করনীতির এই পরিবর্তন দেশীয় বাজারে স্বল্পমেয়াদে চাহিদা কমাতে পারে, যা বিশ্বের সোনার বাজারে সাময়িক চাপ তৈরি করতে পারে।
10
10
বেইজিংয়ের নতুন করনীতি চীনের রাজস্ব ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করলেও ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করবে—যেখানে নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতীক সোনাও আর আগের মতো সহজলভ্য নয়।