হিন্দি ছবির দাপটে কোণঠাসা বাংলা ছবি। বহু বছর ধরেই এই সমস্যা চলছে । কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দেব সহ টলিউডের রথী-মহারথীরা বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার এই সমস্যার কথা বলেছিলেন। তবে এবার এই সমস্যার মূল উপড়ে ফেলতে বৃহস্পতিবার নন্দনে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মুখোমুখি টলিউড। এদিন নন্দনে দেব, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সহ টলিপাড়ার বহু প্রযোজক, পরিচালক, ছবির পরিবেশক, নামী প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধারেরাও এই বৈঠকে যোগ দেন। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ছিলেন স্বরূপ বিশ্বাসও।
বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন ঋতুপর্ণা, দেব, কৌশিক। দেব কোনও রাখঢাক না রেখে স্পষ্ট কথায় বলে দেন, “হিন্দি ছবির নো শো শেয়ারিং -এর শর্ত আর চলবে না! বড় বাজেটের হিন্দি ছবি চললে সেই প্রেক্ষাগৃহে কোনও বাংলা ছবি চলবে না, এসব আর চলবে না। পাঞ্জাব হোক কিংবা দক্ষিণের কোনও রাজ্য - কোথাও এই নিয়ম লাগু নেই, তাহলে বাংলায় কেন চলে এই নিয়ম! তাই, আর চলবে না এসব। বাংলায় যদি বাংলা ভাষার ছবি চলবে কি না তা হিন্দি ছবি ঠিক করে দেয়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। আজ বৈঠক অত্যন্ত সদার্থকভাবে শেষ হয়েছে। সবাই মাইল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এবার থেকে বছরভর ধরে বাংলার যেকোনও প্রেক্ষাগৃহে প্রাইম টাইমের অন্তত একটিতে বাংলা ছবি চলবেই!”

সামান্য থেমে দেব আরও যোগ করেন, “পাশাপাশি এও বলব, শুধু শো-টাইম পেলেই তো হয় না। যে ছবি ভাল ব্যবসা করবে, সে ছবি বেশি চলবে। আমরা সবাই তো বলছি, বাংলার পাশাপাশি হিন্দিও চলুক। তবে আমাদের লড়ার সুযোগটা তো দিতে হবে! কেন হিন্দি ছবির জন্য আমাদের ছবি নামিতে দেওয়া হবে প্রেক্ষাগৃহ থেকে? মাল্টিপ্লেক্সের ক্ষেত্রে তাও এই সমস্যাটা হয় না, কারণ একই ছাদের তলায় একাধিক প্রেক্ষাগৃহ এবং প্রচুর শো টাইমিং থাকে তাদের। সমস্যাটা হয় সিঙ্গল হলদের ক্ষেত্রে।”
পাশে দাঁড়ানো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলে ওঠেন, “বৈঠক খুবই সুন্দর হয়েছে। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা খুবই আনন্দের। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে ধন্যবাদ। এই যে হিন্দি ছবি এলে আমাদের বাংলা ছবি প্রেক্ষাগৃহ পায় না, ঠিকঠাক শো টাইমিং পায় না - এগুলো কী! আমরা এরকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বহু বহু দিন। নিজের মায়ের ভাষার ছবির নিজের রাজ্যেই এই সমস্যা। তবে আজকের পর থেকে এই সমস্যা আর হবে না। বাংলার প্রেক্ষাগৃহ প্রথমে বাংলা ছবির জন্য থাকবে। প্রাইম শো টাইমিংও ভাগাভাগি হবে। পাশাপাশি হিন্দি ছবিও থাকবে অবশ্যই।”
চুপ করে থাকেননি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও। বললেন, “আমার দু’দুটি ছবি দেখতে দর্শক ভিড় করছিলেন প্রেক্ষাগৃহে অথচ হিন্দি ছবির দাপটে, তাদের দেওয়া শর্তে সেই দুই বাংলা ছবি ভাল প্রেক্ষাগৃহ, শো টাইমিং হারিয়েছে। এরকম করলে প্রযোজকেরা কি আর বাংলা ছবি বানাবেন? বাংলায় কাজের আগ্রহ হারাবেন বাংলার বাইরে থেকে আসা প্রযোজক, পরিচালকেরা।
এ প্রসঙ্গে অরূপ বিশ্বাস বললেন, “ঘরের আলোচনা বাইরে বলা সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘ আলোচনা ইতিবাচক। বাংলা ছবিকে নিজের রাজ্যে কোণঠাসা হয়ে থাকতে হবে না। হিন্দি ছবির সমান সংখ্যক হল পাবে বাংলা ছবি।”
