আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকার এসআইআর বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে খসড়া ভোটার তালিকা। ঠিক তার আগেই আতঙ্কের জেরে চরম পদক্ষেপ করলেন এক গৃহবধূ। এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হলেন তিনি। 

সূত্রের খবর, মৃতার নাম, সুবর্ণা গুঁই সাহা(৩৭)। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। মৃতার শ্বশুরবাড়ি দুর্গাপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হর্ষবর্ধন রোড এলাকায়। যুবতীর বাড়ি দমদমের নাগেরবাজার এলাকায়। দুর্গাপুরের বাসিন্দা ডিভিসির কর্মী রণজিৎ গুঁইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। সাত বছরের একটি মেয়েও আছে। বহু বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছিল তাঁর পরিবার। 

রণজিৎ জানিয়েছেন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় সুবর্ণার বাবা-মায়ের নাম ছিল না। কিন্তু তাঁর কাছে ভোটার কার্ড রয়েছে। সুবর্ণার জন্ম এ দেশেই। রাজ্য জুড়ে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি‌। দেশছাড়া হওয়ার ভয় পেতেন। পরিবারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও, আতঙ্ক কাটেনি। 

খসড়া তালিকায় যদি নাম না থাকে, যদি আবারও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা ঘিরেই আতঙ্কে ছিলেন সুবর্ণা। শেষমেশ সোমবার শ্বশুরবাড়িতেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি‌। পরিবারের তরফেও অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, এসআইআর আতঙ্কে বাংলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসআইআর আতঙ্কে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগরপাড়ায়। প্রদীপ করের মৃত্যুতে প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তবুও তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে শেষ করে দেন। 

বীরভূমের ইলামবাজারে ক্ষিতীশ মজুমদার (৯৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলেও তাঁর পরিবারের অভিযোগ। পানিহাটির প্রদীপ করের পর প্রাণ হারান পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার কোরা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ক্ষিতীশ। বেশ কয়েক মাস আগে বীরভূমে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে ইলামবাজারের স্কুলবাগান সুভাষপল্লীতে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন তিনি। পরিবারের অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আতঙ্কই তাঁকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এরপর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জয়পুর এলাকার যুবক সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী। বারবার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। স্ত্রী বারবার অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেও গত বুধবার সকালে তিনি নিজেকে শেষ করে দেন। 

এই আবহে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এক ব্যবসায়ী। সেক্ষেত্রেও পরিবাররে দাবি ছিল, আত্মহত্যার কারণ এসআইআর আতঙ্ক। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘দেশ ছাড়তে হবে’ এই আতঙ্কে গত ৪ নভেম্বর কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ (৫৫)।