উদ্দালক ভট্টাচার্য: শ্যাম বেনেগাল ভারতীয় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে নক্ষত্র সমান। বিস্তৃত ভারতীয় ছবির ইতিহাসে তাঁর সৃষ্টি বারবার চমকে দিয়েছে দর্শকদের। সেই শ্যাম বেনেগালের ছবি 'মন্থন' নতুন করে মুক্তি পেয়েছিল কয়েকদিন আগেই। রিস্টোর্ড ভার্সন হিসেবে সেটি প্রথম দেখানো হয় কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেই ছবিই এবার দেখানো হল কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে। এই ছবি তৈরি হয়েছিল ভারতের মিল্ক ম্যান ভার্গিস কুরিয়ানকে নিয়ে। ভাবতে অবাক লাগে, এই ছবির জন্য ৫ লক্ষ গোয়ালা প্রত্যেকে দিয়েছিলেন ২ টাকা করে। সেই টাকায় তৈরি হয়েছিল ছবি। যা হয়েছিল ইতিহাস। 

ছবির অভিনেতাদের তালিকাও ছিল আকর্ষণীয়। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত স্মিতা পাতিল, গিরিশ কারনাড। এছাড়াও ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নাসিরউদ্দিন শাহ, রত্নাপাঠক শাহ, কুলভূষণ খরবন্দা-সহ আরও কয়েকজন। ১৯৭৬ সালে এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল, ঠিক ৫০ বছর পর ছবি নতুন করে মুক্তি পেল। শুধু শ্বেত বিপ্লবের ইতিহাসকে ফিরে দেখা নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসকেও ফিরে দেখা চলে এই ছবি দেখতে দেখতে। মনে পড়ে, ১৯৭০-৮০ জুড়ে মুম্বইয়ে এবং দেশের নানা প্রান্তে সমান্তরাল ছবি তৈরির লড়াইকে। একদিকে যখন বানিজ্যিক ছবি সম্পূর্ণ অন্য খাতে বইছে, তখনই গৌতম ঘোষ, শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালনি, সৈয়দ আখতার মির্জার সাহসে ভর করে ভারতীয় ছবি পাচ্ছে এক নতুন ভাষা। বামপন্থী ভাবনার প্রকাশ ছিল এদের বেশিরভাগ সৃষ্টির অন্দরে। 'মন্থন' ছবি জুড়েও তাই আছে। এই ছবিতে দেখা যায় দলিত প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ের গল্প। 

এই ছবিতে দেখা যায়, গুজরাটের খেড়া গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে যায় একজন যুবক ব্যবসায়ীর হাত ধরে। তিনি সেই গ্রামেই শুরু করেন একটি দুধের ব্যবসার কোঅপারেটিভ। আমুলের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রার শুরুর কথা বলে এই সিনেমা। কীভাবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শিশুর গণস্বাস্থ্য পাল্টে দিয়েছিল, সেই কৃতজ্ঞতা যেন এই ছবি। তবে এই ছবিতে এটাই মূল কথা নয়। মূল কথা, একটি ভারতীয় গ্রামের জাতপাতের রাজনীতি ও সেই রাজনীতির ভিতরেও দলিত, নিম্নবর্গীয় মানুষের লড়াই। যে কারণেই এটি সেই সময়ের এক ইতিহাস হয়ে আছে এই ছবি। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে রেস্টোর্ড ইন্ডিয়ান ক্লাসিক বিভাগে এই ছবি প্রদর্শিত হল।