রাজকুমার-ওয়ামিকার নতুন ছবির হালহদিশ করলেন পরমা দাশগুপ্ত।
স্মল টাউনের অলিগলি, মজার মোড়কে দুষ্টুমিষ্টি প্রেমের গল্প, একেবারে ছাপোষা ঘরের সাধারণ নায়কের অসাধারণ হয়ে ওঠা, সংলাপ থেকে সিনেম্যাটোগ্রাফিতে ম ম করা মাটির গন্ধ— গত বেশ কয়েক বছরের বক্স অফিস বলছে, এটাই হিট ছবির ফিট ফর্মুলা। সাফল্যের সেই মেডইজি-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করল ‘ভুলচুক মাফ’। হাঁটল এক্কেবারে জানা ছকের চেনা পথ ধরে। বিয়ে করতে গিয়ে ভুলের ফাঁদে পা দেওয়ার গল্প নিয়ে রাজকুমার রাও-ওয়ামিকা গাব্বির এই নতুন ছবি সম্প্রতি হাজির হয়েছে অ্যামাজন প্রাইমে। ছবির টাইটেল কার্ড এগোয় মেঠো সুর আর অ্যানিমেশনের যুগলবন্দিতে। তাতেই জানা হয়ে যায় ছবির নায়ক-নায়িকা, বেনারসের এক্কেবারে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের রঞ্জন তিওয়ারি (রাজকুমার) এবং তিতলি মিশ্রর (ওয়ামিকা) প্রেমকাহিনি এবং বিয়ে করতে চেয়ে বাড়ি থেকে পালানোর কিসসা।
এরপরে মাঝপথেই ঝগড়া বেঁধে দু’জনে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে। দুই বাবা রঘুনাথ তিওয়ারি (রঘুবীর যাদব) এবং ব্রিজমোহন মিশ্রর (জাকির হুসেন) কাজিয়া, রঞ্জনের মা রমাবতী তিওয়ারির (সীমা পাহওয়া) মধ্যস্থতা পেরিয়ে শেষমেশ ঠিক হয়, দু’মাসের মধ্যে সরকারি চাকরি জোটাতে পারলে তবেই রঞ্জনের গলায় মালা দেবে তিতলি। কিন্তু এমন শর্ত পূরণ করাটা যে বড্ড কঠিন। অগত্যা দালাল ভগবান দাসের (সঞ্জয় মিশ্র) শরণাপন্ন হয় রঞ্জন। দু’লাখ টাকার বিনিময়ে বেলাইনে প্যানেলে নাম ঢুকিয়ে, শিবের আশীর্বাদ চেয়ে মন্দিরে মানত করে সেচ দফতরের চাকরি পাকাও হয় তার। বিয়ের হুল্লোড়ে উৎসবের মেজাজে মেতে ওঠে দুই বাড়ির লোকজন। এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু গায়ে হলুদের হইচই পেরিয়ে রাত ভোর হলে ঘুম ভেঙে রঞ্জন দেখে ফের গায়ে হলুদের দিনেই জেগে উঠেছে সে। একের পর এক দিন পেরোয়। কিন্তু ২৯ তারিখ পেরিয়ে কিছুতেই আর বিয়ের দিন, ৩০ তারিখে পৌঁছতে পারেনা রঞ্জন। শেষমেশ কি তিতলিকে বিয়ে করতে পারবে সে? নাকি ভুল পথে হাঁটার মাসুল গুনতে হবে? তা নিয়েই এগোয় ছবির কাহিনি।
একই সময় বা দিনে আটকে ঘুর্ণিপাকের এই টাইমলুপ কনসেপ্ট বলিউডি ছবিতে দেখা যায়না তেমন। তাকেই আঁকড়ে হাসি-ঠাট্টা-মজার সুতোয় প্রেমের গল্প বুনেছেন পরিচালক করণ শর্মা। তাতে একের পর এক ফ্রেমে বেনারসের ঘাট, অলিগলি, গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাড়িঘর, বাজার, ব্রিজ, কচুরি, মিষ্টি, পারিবারিক আমোদ-আহ্লাদ, সহজ-সরল কমেডি, মেঠো তানে বাঁধা গুটিকয়েক গান— সব মিলিয়ে ছবি জুড়ে লেগে থাকে আঞ্চলিক রূপ-রস-গন্ধ। সঙ্গে উঠে আসে সমাজের টুকরো টুকরো ছবি। কখনও কুসংস্কার, কখনও দুর্নীতি, কখনও লিঙ্গবৈষম্য, কখনও বা ভক্তি বা ধর্মবিশ্বাস ঘিরে ব্যবসার ছক।
অভিনয়ের অঙ্কও মিলে যায় ঠিক ঠিক। রাজকুমার দক্ষ অভিনেতা। সাবলীল স্বকীয়তায় এক্কেবারে খাস বেনারসি ঢংয়ে রঞ্জন হয়ে উঠতে তাই এতটুকু সময় নেননি যথারীতি। টকমিষ্টি সংলাপে, কখনও রাগে, কখনও অনুরাগে ওয়ামিকাও এক্কেবারে চনমনে প্রেমিকা। যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, পান বেনারসওয়ালার মতোই খুশবু ছড়িয়েছেন পর্দায়। তবে রঘুবীর যাদব, সঞ্জয় মিশ্র, সীমা পাহওয়াদের মতো বলিষ্ঠ অভিনেতারা ছবিতে থাকলেও তাঁদের উপস্থিতি সংক্ষিপ্তই বলা চলে।
গোলমাল বেধেছে অবশ্য অন্য জায়গায়। টাইমলুপের সঙ্গেই যেন একই জায়গায় ঘুরপাক খেয়েছে প্লট। প্রথম এক-দু’বার মন্দ লাগে না। তবে লুপ যত পাক খায়, একই দৃশ্য, একই ধরনের সংলাপ, একই ধাঁচের ভাবনা ক্রমশ একঘেয়ে হয়ে উঠতে থাকে। সেই একঘেয়েমি যত বাড়ে, কমেডির পরতও যেন বিস্বাদ হয়ে উঠতে থাকে একটু একটু করে। আর শেষমেশ এগোতে এগোতে প্রায় হিতোপদেশের গল্পের পথ ধরে। একই ঘরানার সুরে কিছুটা যেন একঘেয়ে লাগে গানগুলোও।
এদিকে, সেই কবে থেকে ছাপোষা জীবনের স্মল টাউন চরিত্র হয়ে দেখা দিয়েই চলেছেন রাজকুমার। ‘বেরিলি কী বরফি’, ‘স্ত্রী’, ‘ভিকি বিদ্যা কা ওহ ওয়ালা ভিডিও’ পেরিয়ে এবারে ‘ভুলচুক মাফ’। সবেতেই একেবারে যেন এক ছাঁচে গড়া। শুধু তাই নয়, সবেতেই বড্ড বিনা পরিশ্রমে, সহজে রোজগার করাটাই যেন তার অ্যাম্বিশন। রাজকুমারের মতো বলিষ্ঠ অভিনেতার ছবি বা চরিত্র বাছাইয়ে এমন একঘেয়েমি বোধহয় প্রত্যাশিত ছিল না।
শেষপাতে প্রশ্ন একটাই। মজাদার সংলাপ আর টাইমলুপের স্বাদে ট্রেলার আশা জাগিয়ে দিয়েছিল অনেকটা। তারপর মূল ছবিতে এসব ভুলচুক কি দর্শক মাফ করবেন?
