নয়ের দশকের একটি প্রজন্ম যাঁদের শৈশব জুড়ে কেবলই ‘আর্থ! ফায়ার! উইন্ড! ওয়াটার! হার্ট!’ -এর মতো সেই বিখ্যাত কিছু বুলি আওড়ানো চলত, স্রেফ একটি কার্টিন শোয়ের দৌলতে — ক্যাপ্টেন প্ল্যান্ট। তাঁদের জন্য দারুণ খবর। যা শুনে তাঁদের জিয়া নস্ট্যাল হতে বাধ্য! জনপ্রিয় পরিবেশ সচেতন অ্যানিমেটেড সিরিজ ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স ’ ফিরছে একেবারে লাইভ-অ্যাকশন রূপে, নেটফ্লিক্সের পর্দায়।

 

বিশ্ববিখ্যাত অস্কারজয়ী অভিনেতা এবং পরিবেশবিদ লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও এবং অ্যারোভার্স খ্যাত প্রযোজক গ্রেগ বারল্যান্টি থাকছেন এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে। সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখছেন তারা হার্নানডেজ, যিনি 'মিসেস ডেভিস' ও 'ইয়ং শেলডন'-এর লেখকদলে ছিলেন। নতুন সিরিজটি প্রযোজনা করছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স.টেলিভিশন, যেখানে বারল্যান্টির প্রোডাকশন কোম্পানির আগেই একটি চুক্তি রয়েছে।

 

আরও পড়ুন:  পুরোপুরি খালি হাতে রাস্তা থেকে সাপ ধরলেন সোনু সুদ! তারপর যা হল, জানলে শিউরে উঠবেন

 

আসলে, ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট: এক পরিবেশবান্ধব বিপ্লবের নাম। কার্টুনের মূল সিরিজটি প্রচারিত হয়েছিল ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, প্রযোজনা করেছিল ডিআইসি এন্টারটেইনমেন্ট (DIC Entertainment) এবং হান্না বারবেরা । এই ধারাবাহিকটির ভাবনা এসেছিল পরিবেশকর্মী বারবারা পিল এবং মিডিয়া টাইকুন টেড টার্নারের তরফে।

 

সিরিজে পাঁচজন তরুণ প্ল্যানেটিয়ার (Planeteer) থাকত, যাঁরা পাঁচটি প্রাকৃতিক উপাদানের শক্তি (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস ও হৃদয়) নিজেদের মন্ত্রপূত জাদু আংটির ব্যবহার করে ডাকত ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট-কে। লক্ষ্য ছিল—পরিবেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং পৃথিবীকে রক্ষা করা। শুধু দূষণ বা বনভূমি ধ্বংস নয়, সিরিজটি সমাজ সচেতনতামূলক বিষয় যেমন এডসের মতো মারণ রোগ( HIV/AIDS), বুলিং-এর মতো জটিল বিষয়ও ছুঁয়ে যেত। শিশুদের মনেই বুনে দিত পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে দায়িত্ববোধ।

 

 

বর্তমানে ডিক্যাপ্রিওর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে এগোচ্ছে নেটফ্লিক্স। এক প্রথম সারির মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী , গত কয়েক বছর ধরেই ডিক্যাপ্রিও চাইছেন ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট-কে পর্দায় ফিরিয়ে আনতে। তিনি নিজেই ২০০৮ সালে তৈরি করেছিলেন দ্য লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ফাউন্ডেশন, যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর শেষ অবশিষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা ও মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনা। তাঁর ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে ৩৫টিরও বেশি পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে সহায়তা করেছে বিশ্বজুড়ে। ফলে এই শো-এর সঙ্গে তাঁর জড়িয়ে পড়া নিছক প্রযোজনার দায়িত্ব নয়, এটি এক আদর্শবাদী সংযুক্তি।

 

এই মুহূর্তে ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট সিরিজের কোনও কাস্টিং ঘোষণা হয়নি। ডিক্যাপ্রিও নিজেই এই সুপারহিরো সিরিজের মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করবেন কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। নেটফ্লিস্কও এখনও আনুষ্ঠানিক রিলিজ ডেট জানায়নি, তবে চিত্রনাট্যের কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গিয়েছে।

 

নস্ট্যালজিয়া, আধুনিক গল্প এবং পরিবেশের প্রতি সচেতন বার্তার অনন্য মিশ্রণে তৈরি এই ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট রিবুট হতে চলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক মুহূর্ত। নতুন প্রজন্মের জন্য সমাজ, প্রকৃতি বিষয়ে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সহ জমাটি বিনোদন, আর পুরনো প্রজন্মের জন্য এক আবেগময় প্রত্যাবর্তন তাঁদের অন্যতম প্রিয় সুপারহিরোর।

 

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েকটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার হয়েছে ইকুয়েডরে। প্রাণিটির নাম দেওয়া হয়েছে 'ফিলোনাসতেস ডিক্যাপ্রিও'। যা কি না লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও-র নাম অনুসারে। কেন এমন করল ইকুয়েডর?

 

সম্প্রতি সাতটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙের হদিস পেয়েছেন স্যান ফ্রানসিসকো ইউনিভার্সিটি অফ কুইটো (ইউএসএফকিউ), ইকুয়েডরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বায়োডায়ভার্সিটি এবং ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ ইকুয়েডরের গবেষকরা। আকারে ছোট এই প্রজাতির ব্যাঙের গায়ের রঙ বাদামি। চামড়ায় কালো ছোপ রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩০০-১৭০০ মিটার উচ্চতায় এরা বসবাস করতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, পরিবেশ সংক্রান্ত কাজে অস্কারজয়ী বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা লিওনার্দোর অবদানের জন্যই তাঁর নামে ব্যাঙের প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। তাঁর উদ্যোগেই ইকুয়েডরের ইয়াসুন জাতীয় উদ্যানে বিতর্কিত তেল খনন বন্ধ হয়েছে। 

 

২০২৪ সালে হিমালয়ে আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতির সাপের নামও লিও-র নামে রাখা হয়েছিল। নেপাল থেকে হিমাচল প্রদেশের চাম্বা জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ওই প্রজাতির সাপের দেখা মেলে। নাম দেওয়া হয়েছিল 'অ্যাঙ্গুইকুলাস দিক্যাপ্রিওই'। এর ২০১৭ সালে অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ডের নামে নতুন প্রজাতির সাপের নামকরণ করা হয়েছিল 'ট্যাকিমেনইডেস হ্যারিসনফোর্ডি'। প্রাণিবিজ্ঞানী তথা ইংরাজি রক ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়েডের ভক্ত ড. স্যামি ডে গ্রেভ একটি চিংড়ি প্রজাতির নাম রেখেছিলেন 'সিনালফিয়াস পিঙ্কফ্লয়েডি'।