৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘিরে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে বিতর্ক! এবারের জাতীয় পুরস্কারে সবচেয়ে বিস্ময়কর সিদ্ধান্তগুলির একটি ছিল বিতর্কিত হিন্দি ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-কে সেরা পরিচালক (সুদীপ্ত সেন) এবং সেরা চিত্রগ্রহণ-এর পুরস্কার দেওয়া। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি ধর্মান্তর, উগ্রপন্থা এবং আইএসআইএস-এর মদতে মেয়েদের মৌলবাদে দীক্ষিত করা নিয়ে তৈরির মতো বিষয়। মুক্তির  প্রথম দিন থেকেই এ ছবি রাজনৈতিক আলোড়নের পাশাপাশি চরম বিতর্ক তৈরি করে।

 

জাতীয় পুরস্কার ঘোষণার পরেই কেরালা মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন,“ভারতীয় সিনেমার ঐতিহ্যকে অপমান করা হয়েছে। এই পুরস্কার আসলে বিভাজনের রাজনীতিকে বৈধতা দেওয়ার মতো।”শুক্রবার এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ বিজয়ন লেখেন:

 

“একটি মিথ্যাচারভিত্তিক চলচ্চিত্রকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য কেরালার ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো। এই সিদ্ধান্ত কেবল কেরালাবাসী নয়, যে কোনও গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকের কাছে দুঃখজনক।”“সংঘের পারিবারিক মতাদর্শের প্রচারে জাতীয় পুরস্কারকে ব্যবহার করা হয়েছে।” ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে যাঁরা পুরস্কৃত করেছেন, তাঁরা নিশ্চিতভাবে সংঘ পরিবারকে খুশি করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সোশাল মিডিয়ায় দাবি করেন বিজয়ন।

 


পরিচালক সুদীপ্ত সেনের পালটা জবাব, “আমি মনে করি পিনারাই বিজয়ন আমার সিনেমা দেখেননি। দেখলে এমন মন্তব্য করতেন না।”

 

তিনি আরও জানান,“আজ থেকে ১৫ বছর আগে কেরালার এক শীর্ষ রাজনীতিক দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন যে পিএফআই এবং এসজিপিআই-র প্রভাবে কেরালা একটি আইএসআইএস রাজ্যে পরিণত হতে পারে। সেই মন্তব্যের পক্ষে প্রথম সাপোর্ট দিয়েছিলেন বিজয়ন স্বয়ং, তখন তিনি সিপিআইএমের সেক্রেটারি ছিলেন।আজ যিনি বিরোধিতা করছেন, তিনিই একসময় একই কথা বলেছিলেন। সেই স্মৃতি মানুষ ভোলেনি।”

 

সুদীপ্ত সেন আরও বলেন,“আমরা ১২ বছর রিসার্চ করেছি এই ছবির জন্য। কেরালার বিভিন্ন ব্লকে ঘুরেছি, ৫০০-এরও বেশি মেয়ের সাক্ষাৎ নিয়েছি। সেন্সর বোর্ড যখন ছবি আটকে দিয়েছিল, আমরা প্রত্যেকটি সংলাপের জন্য তথ্যপ্রমাণ দিয়েছি।আমি কোনও রাজনীতি করি না। আমার কাজ ছবি বানানো। কেউ ইনস্টাগ্রামে বা টুইটারে মন্তব্য করে আমাকে মিথ্যে প্রমাণ করতে পারবে না।”

 

তিনি শেষমেশ বলেন,“আমার অনুরোধ, পিনারাই বিজয়ন একবার ছবিটা দেখুন। যদি একটি সংলাপ বা দৃশ্য ভুল মনে হয়, তা হলে বলুন।”

 

 

 ‘দ্য কেরালা স্টোরি’—কী নিয়ে বিতর্ক?

ছবিতে দেখানো হয়, কেরালার বহু মেয়ে আইএসআইএস জঙ্গিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যায়।নির্মাতারা প্রথমে দাবি করেন, ৩২০০০ মেয়ে এই ঘটনার শিকার হয়েছেন।কিন্তু এই তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করে কেরালা সরকার আদালতে মামলা করে। ফলে পরবর্তীতে সিনেমা থেকে ওই সংখ্যাটি বাদ দিতে বাধ্য হন নির্মাতারা। ছবির মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন আদা শর্মা।বক্স অফিসে ছবি দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে—৩০০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে এ ছবি।

 

অন্যদিকে, বিতর্ক শুরু হয়েছে জাতীয় পুরস্কারের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে এ বছর রানি মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করা নিয়েও।  অনেকেই বলছেন— রানির তুলনায় অভিনেত্রী শেফালি শাহ আরও বেশি প্রাপ্য ছিলেন এই স্বীকৃতির।