সংবাদ সংস্থা মুম্বই: উর্দু সাহিত্যের মণিমুক্তো তিনি। কবিতা, গানে, গল্পে— প্রতিটি অক্ষরে রঙ ছড়ানো তাঁর কারুকাজ। এবার সেই গুলজারই পেলেন দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্যসম্মান— ৫৮তম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। গুলজারের বাসভবনেই এক ঘরোয়া, আন্তরিক আয়োজনে তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হল ভারতীয় জ্ঞানপীঠ।

 

গত সপ্তাহে দিল্লিতে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হলেও, অসুস্থতার কারণে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেননি গুলজার সাহেব। বৃহস্পতিবার বান্দ্রার পালি হিলের বাড়িতে তাঁকে পুরস্কার দিতে যান জ্ঞানপীঠ ট্রাস্টের প্রতিনিধি মুদিত জৈন, ধর্মপাল ও আর এন তিওয়ারি। উপস্থিত ছিলেন জামাই গোবিন্দ সন্দু, পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ ও তাঁর স্ত্রী রেখাও।

 

সাদা ঝকঝকে কুর্তা-পাজামা, কাঁধে চাদর জড়ানো সেই চেনা ছন্দেই গুলজার। সংক্ষিপ্ত অথচ মর্মস্পর্শী বক্তৃতায় তিনি বললেন, “বাংলা, মারাঠি, তামিল বা গুজরাটিকে আঞ্চলিক ভাষা বলে ফেলা যায় না। এই ভাষাগুলোর ভান্ডারে এত অভিজ্ঞতা, এত ভাবনার বাহার, যা বড় বড় ভাষাতেও মেলে না। যারা বড় ভাষায় লেখেন, তাঁদেরও এই ভাষাগুলোর লেখকরা অনেক কিছু শেখাতে পারেন।”

 

 

নিজের লেখাকে খেলনার মতো তুলনা করে গুলজার বললেন, “আজকের কবি-লেখককে নতুন করে ভারতের মাটিতে নিজেদের ভাবনা আঁকতে হবে। কারণ সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবতা, পরিবেশ ও লিঙ্গ-ন্যায়বিচারের যে অবক্ষয়, তা আটকাতে সাহিত্যের দায়িত্ব অনেক বেশি।”

 

পুরস্কার হিসেবে গুলজারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১১ লক্ষ টাকার চেক, দেবী সরস্বতীর ব্রোঞ্জ মূর্তি, রেশমের উত্তরীয়, নারকেল এবং এক সংবর্ধনাপত্র। সেই সংবর্ধনায় গুলজারকে ‘আমাদের সময়ের কণ্ঠস্বর’ বলে বর্ণনা করে লেখা হয়, “তাঁর লেখায় লোকজ আর শাস্ত্রীয় ধারা মিশে যায় অনায়াসে। উর্দুর আধুনিক রূপকে তিনি যেমন গড়ে তুলেছেন, তেমনই সাহিত্যের সমস্ত শৈলী ও ভাবনাকে বুকে টেনে নিয়েছেন।”

 

পুরস্কার পেয়ে গুলজার বললেন, “জ্ঞানপীঠ পুরস্কার যেন ঝড়জলের মাঝে বাতিঘরের মতো। লেখক যখন খুঁজে পান, ‘থাপ্পি’টা পড়ল ঠিক জায়গাতেই, তখনই বোঝা যায়, পথটা ভুল ছিল না।” এই মুহূর্তে গুলজার লিখছেন নতুন বই ‘আমচি মুম্বই’, সেই শহরকে নিয়ে, যেখানে ১৯৬০ সালে প্রথম আশ্রয় পেয়েছিলেন। সেই আশ্রয়, সেই শহর, আজও তাঁর কলমে প্রাণ পায়।

 

এক জীবনে কত ভাষা, কত ভাবনা, কত অভিজ্ঞান! গুলজার— শুধু সাহিত্যিক নন, তিনিই তো আমাদের সময়ের সত্যিকারের ‘বাতিঘর’!