আকাশ দেবনাথ, কলকাতা: বাংলায় পিরিয়ড ড্রামা করতে সাহস লাগে। আর সেই ছবি যদি সত্য-নির্ভর হয় তাহলে চাপ থাকে আরও বেশি। ‘বিনোদিনী - একটি নটীর উপাখ্যান’ ছবিতে পরিচালক রাম কমল মুখোপাধ্যায় সে সাহস দেখিয়েছেন। সে জন্য তাঁর প্রশংসা প্রাপ্য। প্রশংসা প্রাপ্য রুক্মিণী মৈত্রেরও। তিনি নাম ভূমিকায় না থাকলে ছবিটির বপু এত বিশাল হত কি না বলা শক্ত। তাঁদের চেষ্টা কি সফল হল? যাচাই করল আজকাল ডট ইন। 


বিনোদিনী চরিত্রকে পপ কালচারের অংশ হিসাবে আগেও বিভিন্ন সময় পর্দায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু এমন ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ভাবে দেখা গিয়েছে কি না সন্দেহ। ‘বিনোদিনী - একটি নটীর উপাখ্যান’ ছবি দেখতে বসেই এই বিষয়টি প্রথম নজর কাড়ে। ক্যামেরার কাজ এবং সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভাল। ভাল আর্ট ডিরেকশন এবং কস্টিউম ডিজাইনও। বিশেষ করে রাতের দৃশ্যে আলো এবং ক্যামেরার কাজ নজর টানে। ছবির আরেকটি শক্তিশালী দিক সহ-অভিনেতারা। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল বোস, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, মীর, ওম- প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকায় সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। সীমিত পরিসরে নিজের অভিনয় দেখিয়েছেন চন্দন রায় সান্যালও। গিরিশ ঘোষের ভূমিকায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগবে কেন তাঁকে আরও বেশি ক্যামেরার সামনে দেখা যায় না। একই কথা প্রযোজ্য চান্দ্রেয়ী ঘোষ তথা ‘গোলাপ’-এর জন্যেও। তবে এই ছবির মুখ্য আকর্ষণ রুক্মিণী। অভিনেত্রী চেষ্টাও করেছেন যথা সম্ভব। বিনোদিনীর চরিত্র এবং সার্বিক ভাবে ছবিটির প্রতি তাঁর সমর্পণ সত্যিই চোখে পড়ে। তবে একার কাঁধে এত বড় ছবিটি টেনে নিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন।

এ বার আসা যাক পরিচালনার দিকে। সন্দেহ নেই প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিতে রাম কমল নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বিনোদিনীর জীবনের সংগ্রাম, উত্থান-পতন, সবটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। চেষ্টা করেছেন কোনও ফাঁক যাতে না থাকে। এই চেষ্টা যেমন একদিকে ছবির প্রাণ, তেমনই হয়তো এটিই এই ছবির দুর্বলতাও বটে। গিরিশ ঘোষের সঙ্গে বিনোদিনী দ্বন্দ্ব, রামকৃষ্ণের পর্দায় আসা, বিনোদিনীর বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়ার মুহূর্তগুলি টানটান। কিন্তু তার বাইরে বেশ কিছু অংশে ছবির গতি শ্লথ হয়ে যায়, লম্বা লাগে। সম্ভবত বিনোদিনীর গোটা জীবন বিস্তারে দেখাতে গিয়েই মুখ্য ঘটনাগুলির উপর আলাদা করে জোর দিতে পারেননি পরিচালক। আবার বিনোদিনী স্টার থিয়েটার ছাড়ার পর হঠাৎ করেই যেন শেষ হয়ে যায় ছবি। রাম কমলের বিনোদিনীর আরও একটি মনে রাখার মতো দিক ছবির আবহ সঙ্গীত এবং গান। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অনবদ্য সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ জুটি। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাব্দী আগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে এক নারীর আত্মপরিচয় তৈরির সংগ্রামের চিহ্ন হিসাবে মনে থেকে যাবে ‘বিনোদিনী - একটি নটীর উপাখ্যান’।