বলিউডের কালজয়ী ছবি ‘ডন’-এর পরিচালক চন্দ্র বারোট প্রয়াত। তাঁর হাত ধরেই ১৯৭৮ সালে তৈরি হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ারের অন্যতম মাইলস্টোন ‘ডন’। রবিবার সকালে মুম্বইয়ের গুরু নানক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।পরিচালকের স্ত্রী দীপা বারোট জানিয়েছেন, দীর্ঘ সাত বছর ধরে পালমোনারি ফাইব্রোসিসে ভুগছিলেন চন্দ্রজি। শেষ সময় পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন মুম্বইয়ের একাধিক হাসপাতালে।
এই দুঃসংবাদের পর এক আবেগঘন ব্লগপোস্টে শ্রদ্ধা জানালেন ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চন। লিখলেন,“আমার প্রিয় বন্ধু এবং ‘ডন’-এর পরিচালক চন্দ্র বারোট আজ সকালে প্রয়াত হয়েছেন... এই শোকের ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি ঠিকই, তবে ও আমার পরিবার-সম বন্ধু ছিলেন। আমি শুধু প্রার্থনা করতে পারি।”
‘ডন’ ছবির নেপথ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল চন্দ্র বারোট ও অমিতাভের মধ্যে, তা নিছক পেশাদার ছিল না—ছিল পারিবারিক, আন্তরিক। ‘ডন’ ছবির মূল চিত্রনাট্য বহু তারকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় চন্দ্র বারোট, অমিতাভ ও জিনাত আমান সিদ্ধান্ত নেন, ছবিটি করবেন, এবং একজন বন্ধু ও সিনেমার প্রযোজকের ঋণ মেটানোর জন্যই তাঁরা একজোট হয়েছিলেন। বাকিটা ইতিহাস।
‘ডন’-এ অমিতাভের ডুয়েল রোল—ডন ও বিজয়—তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ছবির গান, সংলাপ, এবং চিত্রনাট্য ভারতীয় পপ কালচারে জায়গা করে নেয়। আর তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি ছিলেন চন্দ্র বারোট।
আজ তাঁর প্রয়াণে যেন এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। কিন্তু চন্দ্র বারোটের অবদান ‘ডন’-এর মতো আইকনিক ছবির মাধ্যমে যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবে। অমিতাভের চোখে জল, কিন্তু তাঁর শব্দে শ্রদ্ধা—চিরন্তন।
চন্দ্র বরোটের প্রয়াণে প্রথম শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বলিউড পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার, যিনি নিজেই ‘ডন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির উত্তরসূরি। ইনস্টাগ্রামে চন্দ্র বরোট ও অমিতাভ বচ্চনের পুরনো ছবি শেয়ার করে ফারহান লেখেন— “আসল ডন ছবির পরিচালক আমাদের মধ্যে আর নেই। শুনে খুবই খারাপ লাগছে। শান্তিতে ঘুমোন চন্দ্র বরোটজি। ওঁর পরিবারকে জানাই আমার সহমর্মিতা।”চন্দ্র বরোট: ‘ডন’ শুধু সিনেমা নয়, এক বন্ধুত্বের গল্পও। আজ যাকে ব্লকবাস্টার বলে প্রশংসা করা হয়, সেই ১৯৭৮ সালের ‘ডন’-এর চিত্রনাট্য প্রথমে বলিউডের একাধিক তারকা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু বন্ধুর ঋণের বোঝা মেটাতে চন্দ্র বরোট, অমিতাভ বচ্চন ও জিনাত আমান মিলে শুরু করেছিলেন এই প্রকল্প।চন্দ্র বরোট ছিলেন মনোজ কুমারের সহকারী পরিচালক। সেখানেই ‘রুটি কাপড়া আর মকান’-এর শুটিংয়ে আলাপ হয় অমিতাভ ও জিনাতের সঙ্গে। এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফার নারিমান ইরানি ওরফে ‘বাওয়া’-র সঙ্গেও গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই বন্ধুত্ব থেকেই জন্ম নেয় ‘ডন’—একটি আইকনিক হিন্দি সিনেমা।
ডন’-এ অমিতাভ বচ্চনের দুটো রূপ—একদিকে মাফিয়া, আর একদিকে সাধারণ গ্রামবাসী। সঙ্গী সেই সময়ের দুর্দান্ত সংগীত, বিদ্যুৎ-ঝলসানো সংলাপ ও অ্যাকশন। ছবিটি মুক্তির পর রাতারাতি কাল্ট ক্লাসিক হয়ে ওঠে। ২০০৬ সালে ফারহান আখতার প্রথম রিমেক করেন ‘ডন’, যেখানে অ্যান্টি-হিরোর ভূমিকায় ছিলেন শাহরুখ খান। সঙ্গী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অর্জুন রামপল, ইশা কোপ্পিকার প্রমুখ। ২০১১-তে আসে ‘ডন ২: দ্য কিং ইজ ব্যাক’, যেখানে আবার ফিরলেন শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা জুটি। এবং বর্তমানে এই ছবির সিরিজের তৃতীয় কিস্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফারহান, যেখানে নতুন ‘ডন’ হিসেবে দেখা যাবে রণবীর সিং-কে।
চন্দ্র বরোট আজ নেই। কিন্তু তিনি রেখে গেলেন এমন একটি উত্তরাধিকার, যা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছুঁয়ে যাচ্ছে। ‘ডন’ শুধু একটি ছবি নয়, এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস—আর সেই ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়টি লিখেছিলেন তিনিই।
