বিল্পবী অনন্ত সিং-এর বায়োপিক নিয়ে আসছেন পরিচালক পথিকৃৎ বসু। ছবির নাম 'কেউ বলে বিপ্লবী, কেউ বলে ডাকাত'। ছবিতে মুখ্য চরিত্র অনন্ত সিং-এর ভূমিকায় দেখা যাবে জিৎকে। এই খবর আগেই এসেছিল। এবার জানা যাচ্ছে ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। এই ছবিতে তাঁকে দেখা যেতে চলেছে নেতিবাচক চরিত্রে। দুর্গা রায়ের চরিত্রে এবার পর্দায় টোটাকে দেখা যেতে চলেছে।

এই ছবিতে জিৎকে বিপ্লবী অনন্ত সিংয়ের লুকে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্বে আছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর উপর। 'কেউ বলে বিপ্লবী, কেউ বলে ডাকাত' ছবিটির মিউজিকের দায়িত্বে রয়েছেন শান্তনু মৈত্র।
পথিকৃৎ বলেন, "আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত যে টোটা রায়চৌধুরী কেউ বলে বিপ্লবী কেউ বলে ডাকাত ছবিতে দুর্গা রায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন। টোটাদার বড় ভক্ত হিসেবে আমি সবসময়ই তাঁর ব্যক্তিত্ব ও পর্দার উপস্থিতিকে প্রশংসা করেছি। আর বহুদিন ধরে চেয়েছি তাঁকে একেবারে পূর্ণাঙ্গ অ্যাকশন অবতারে দেখতে। এই ছবিই সেই স্বপ্নকে সত্যি করছে।"
আরও পড়ুন: জুটি বাঁধছেন রণজয়-দেবাদৃতা, ত্রিকোণ প্রেমের ফাঁদে পা দেবেন মানালিও! কবে আসছে নতুন সিরিজ?
তিনি আরও বলেন, "দুর্গা রায় আসলে অনন্ত সিংহের চিরশত্রু — নেতিবাচক অর্থে নয়, বরং এক শক্তিশালী আইনরক্ষক হিসেবে বিদ্রোহের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রতিপক্ষ। একে অনেকটা ইস্ট বেঙ্গল বনাম মোহনবাগান দ্বন্দ্বের মতো বলা যায় — দুই দিক থেকে আসা দুই মহীরুহের সংঘর্ষ। তাই জিৎদা আর টোটাদার মুখোমুখি সংঘর্ষ নিঃসন্দেহে হবে এক দুর্দান্ত সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা। টোটাদাই সেই উপযুক্ত অভিনেতা, যিনি তীব্রতা, ভারসাম্য আর কর্তৃত্ব এনে জিৎদার পর্দার আভার বিপ্রতীপে সমানভাবে একটি চরিত্রকে গড়ে তুলতে পারবেন।"
টোটা রায়চৌধুরীর কথায়, "একজন অভিনেতা হিসেবে আমি সবসময় চিত্রনাট্যকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। কেউ বলে বিপ্লবী কেউ বলে ডাকাত পড়ার পরই বুঝেছিলাম, এর মধ্যে সেই দৃঢ়তা ও গভীরতা রয়েছে যা আমি খুঁজছিলাম। আমার চরিত্রটি বহুস্তরীয়, যেখানে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও সূক্ষ্মতা রয়েছে—যা আমাকে সত্যিই উত্তেজিত করেছে। আমি সবসময় পথিকৃতের কাজ পছন্দ করেছি, আর এই প্রজেক্টে অবশেষে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারছি বলে খুব ভাল লাগছে। প্রযোজকচ প্রদীপ কুমার নন্দীর পেশাদারিত্ব এবং ছবির প্রতি তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমাকে মুগ্ধ করেছে— এই ছবির ভিশনের প্রতি আমার আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বোপরি, জিৎ আর বহুদিনের বন্ধু হলেও, একসঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। আমি আনন্দিত যে এই ছবি অবশেষে আমাদের প্রথমবারের মতো একসঙ্গে পর্দায় নিয়ে আসছে।"
প্রসঙ্গত, ১৯৬০-এর দশকের কলকাতার পটভূমিতে তৈরি হবে ছবিটি। সেসময় সমাজের প্রভাবশালীদের লক্ষ্য করে একের পর এক পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনা একদিকে ভয় এবং মুগ্ধতা উভয়কেই জাগিয়ে তোলে। এর পিছনে রয়েছে অনন্ত—একজন বয়স্ক, রহস্যময় ব্যক্তিত্ব যাকে কেউ অপরাধী হিসেবে ভাবেন। আবার কেউ তাঁকে ভাবেন মসিহা। ইন্সপেক্টর দেবী রাই যখন ঘটনার তদন্ত শুরু করেন, সেসময় দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায় জনগণ। কেউ বলেন তিনি কি ডাকাত নাকি কোনও বিপ্লবীর পুনর্জন্ম হয়েছে?
এই ছবি অনন্তের অতীতের স্তরগুলিকে তুলে ধরবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মাস্টারদা সূর্য সেনের অধীনে একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে এবং দুর্নীতি ও লোভের মুখে জাতির আদর্শ ভেঙে পড়তে দেখে একজন মোহভঙ্গ মানুষ হিসেবে। সেই আদর্শের বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে অস্বীকার করে, অনন্ত উগ্র ন্যায়বিচারের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তার যুদ্ধ দক্ষতা এবং কৌশলগত মন ব্যবহার করে একটি নতুন যুদ্ধে লড়াই করে সে। এবার, দরিদ্রদের জন্য। নিজের অতীত- বর্তমানের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি, অনন্ত মুক্তি, বিদ্রোহ এবং ন্যায়বিচারের নৈতিক মূল্যের গল্পে পরিণত হয়। অনন্ত সিং-এর জীবনের নানা অদেখা দিককে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে প্রস্তুত পথিকৃৎ।
