আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবসর জীবনে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে যদি আপনি অবসর নেওয়ার পর প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা স্থায়ী পেনশন চান, তবে বুদ্ধিমানের সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS) এমনই একটি বিকল্প যা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। যদি আপনি সঠিক সময়ে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগ শুরু করেন।
এখানে আমরা জানার চেষ্টা করব, ৪০ বছর বয়সে কেউ যদি অবসরের পর প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা পেনশন পেতে চান, তাহলে তাঁকে NPS-এ কত টাকা মাসে বিনিয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: মানুষের ডিএনএ-তে রয়েছে ভাইরাস, মাথায় হাত গবেষকদের
NPS কী?
NPS একটি দীর্ঘমেয়াদী অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্প, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয় এবং PFRDA (Pension Fund Regulatory and Development Authority) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
এতে দুটি ধরনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে:
Tier-I: আবশ্যিক পেনশন অ্যাকাউন্ট
Tier-II: স্বেচ্ছামূলক সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট
Tier-I অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করলে টাকা ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত লক-ইন থাকে। এখানে বিনিয়োগের অর্থ শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিভক্ত হয়। বিনিয়োগকারী চাইলে নিজেই অ্যাসেট অ্যালোকেশন নির্ধারণ করতে পারেন।
ট্যাক্স ছাড় সুবিধা : ধারা 80CCD(1) এর অধীনে, NPS-এ বছরে ১.৫ লাখ পর্যন্ত বিনিয়োগে কর ছাড় পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ৫০,০০০ পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায় ধারা 80CCD(1B) এর অধীনে, শুধুমাত্র NPS বিনিয়োগে। অর্থাৎ, মোট ২ লাখ পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় পাওয়া যায় NPS বিনিয়োগে।
প্রতি মাসে ১ লাখ পেনশন পেতে হলে কত বিনিয়োগ লাগবে?
ধরা যাক, কেউ ৪০ বছর বয়সে NPS-এ বিনিয়োগ শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০ বছর নিয়মিত বিনিয়োগ করেন। তাহলে তাঁকে প্রায় ৪.৯৭ কোটি টাকার করপাস তৈরি করতে হবে। NPS বিনিয়োগ থেকে গড় বার্ষিক রিটার্ন ১০% পাওয়া যাবে। অবসরের পরে অ্যানুইটি রিটার্ন হবে প্রায় ৬%।

হিসাবটা কীভাবে করা হয়েছে?
যদি কেউ প্রতি মাসে ৬৫,০০০ করে NPS-এ বিনিয়োগ করেন ২০ বছরে গড়ে ১০% রিটার্ন পান। তাহলে ম্যাচুরিটির সময় তাঁর মোট করপাস হবে আনুমানিক ৪.৯৭ কোটি। এর মধ্যে ৬০% অংশ (২.৯৮ কোটি) ট্যাক্স ছাড়ে এককালীন তুলে নেওয়া যাবে। ৪০% অংশ (১.৯৯ কোটি) অ্যানুইটি কেনার জন্য ব্যবহার করতে হবে। যদি এই অ্যানুইটি থেকে বার্ষিক ৬% রিটার্ন পাওয়া যায়, তাহলে আজীবনের জন্য প্রায় ১ লাখ মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে। এটি একটি আনুমানিক হিসাব। আসল পেনশন নির্ভর করবে বিনিয়োগের পরিমাণ, রিটার্ন রেট এবং নির্বাচিত অ্যানুইটি প্ল্যানের উপর।
NPS-এর ম্যাচুরিটি-সংক্রান্ত নিয়ম:
যদি মোট করপাস ৫ লাখের কম হয়, তাহলে পুরো টাকা করমুক্তভাবে তুলে নেওয়া যাবে। যদি করপাস ৫ লাখের বেশি হয় তাহলে ৬০% টাকা করমুক্তভাবে তোলা যাবে। বাকি ৪০% টাকা দিয়ে অ্যানুইটি কেনা বাধ্যতামূলক। মাসিক পেনশন হিসেবে প্রাপ্ত অর্থে আপনার আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হবে।
NPS কেন ভালো একটি অপশন?
দীর্ঘমেয়াদী কম্পাউন্ডিং-এর সুবিধা: যত আগে শুরু করবেন, তত বেশি লাভ।
কম খরচের স্কিম: অন্যান্য মিউচুয়াল ফান্ডের তুলনায় ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ফি অনেক কম।
স্বচ্ছতা ও পছন্দের স্বাধীনতা: ইকুইটি ও ডেট বিনিয়োগে নিজেই অ্যালোকেশন বেছে নেওয়া যায়।
নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা: PFRDA দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় প্রতারণার সম্ভাবনা কম।

NPS উপযুক্ত কারা?
যারা দীর্ঘমেয়াদী অবসর পরিকল্পনা করছেন। যারা কর ছাড় পেতে চান। যারা কম ঝুঁকির এবং স্থিতিশীল রিটার্নের প্ল্যান চান। যারা ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে চান। আপনি যদি ৪০-এর ঘরে থাকেন এবং অবসরের পর প্রতি মাসে ১ লাখ পেনশন পেতে চান, তাহলে আজ থেকেই NPS-এ নিয়মিত বিনিয়োগ শুরু করুন। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে আপনাকে শুধু নিরাপদ অবসর জীবনই দেবে না, বরং আপনাকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভরও করে তুলবে।
বিনিয়োগের আগে অবশ্যই আপনার ফাইনান্সিয়াল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং আপনার আয়, খরচ ও ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঠিক করুন।
