Bumper to Bumper car insurance
নিজস্ব সংবাদদাতা: গাড়ি কেনা মানে শুধু যাতায়াতে সুবিধা নয়, যেখানে জড়িয়ে থাকে বহু মানুষের আবেগ, স্বপ্ন এবং একটি বড়ো ইনভেস্টমেন্ট। তবে এটি ভুলে গেলে চলবে না, গাড়ি রাস্তায় নামার পর থেকেই তার depreciation বা মূল্যহ্রাস শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ, গাড়ির বিমার ক্ষেত্রে যখন গাড়ির কোনও পার্ট সারানো হয়, তখন সেটা বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী হয়। ফলে মেরামতের খরচের বড় অংশই শেষ পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে দিতে হয়।
এই বড় অঙ্কের খরচ সামলাতে অনেকে বাম্পার টু বাম্পার ইন্সুরেন্স করে থাকেন। যাকে অনেকে জিরো ডেপ্রিসিয়েশন কভার নামেও চেনেন। আজকের ব্লগে সহজ ভাষায় বোঝানো হবে, এই কভার আসলে কতটা দরকারি, কাদের জন্য উপযোগী।
বাম্পার টু বাম্পার কার ইন্সুরেন্স কি?
এটি মূলত আপনার car insurance যুক্ত করা একটি অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা। অনেকেই মনে করেন, সাধারণ বিমা নিলেই গাড়ির সব ধরনের ক্ষতি পুরোপুরি কভার হয়, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।
গাড়ির বিভিন্ন পার্টস, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট, সেন্সর, প্লাস্টিক বা ফাইবার বডি-পার্ট, সময়ে সময়ে মূল্যহ্রাসের কারণে কম দামে গণনা করা হয়। ফলস্বরূপ, খরচের বড় অংশ নিজের পকেট থেকে দিতে হয়।
কিন্তু Zero Depreciation Cover যুক্ত করলে এই ডেপ্রিসিয়েশন কেটে দেওয়া হয় না। অর্থাৎ—
ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পূর্ণ মূল্য বিবেচনায় নিয়ে ক্লেইম মেটানো হয়।
নিজের পকেট থেকে খরচ অনেক কম পড়ে।
এবং মেরামতির সময় কোনও লুকানো বা অপ্রত্যাশিত খরচের ভয় থাকে না।
কেন নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে এই বাম্পার টু বাম্পার ইন্সুরেন্স দরকার?
নতুন গাড়ির মালিকদের জন্য Bumper to Bumper car insurance ইন্সুরেন্স বাস্তবিক অর্থেই একটি অত্যাবশ্যক রাইডার। তার কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হল-
নতুন গাড়িতে ডেপ্রিসিয়েশন সবচেয়ে বেশি হয়
গাড়ি শোরুমের বাইরে বের করার সঙ্গে সঙ্গেই এর মূল্য কমে যায়, এটা শুনতে কঠিন হলেও সত্যি। প্রথম দুই–তিন বছরে গাড়ির ভ্যালুর হার সবচেয়ে বেশি। তাই এই সময়ে দুর্ঘটনা হলে সেটি মেরামত করার জন্য বিমা থাকলেও কিছু টাকা নিজেকে দিতে লাগে। এই খরচ কমাতে এই ইন্সুরেন্স খুবই কার্যকর।
লোনে গাড়ি কিনলে অতিরিক্ত সুরক্ষা আরও প্রয়োজনীয়
অনেকেই গাড়ি কেনেন লোনের মাধ্যমে এবং প্রতি মাসে EMI দেন। এই ক্ষেত্রে আর্থিক চাপ নিয়ন্ত্রিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি দুর্ঘটনায় বড়সড় খরচ আসে, তাহলে পুরো বাজেটই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। বাম্পার টু বাম্পার ইন্সুরেন্স কভার থাকলে এই রকম খরচের ঝুঁকি কমে। EMI চালিয়ে যেতে আর্থিক সমস্যা হয় না এবং একই সঙ্গে গাড়ির সুরক্ষাও নিশ্চিত থাকে।
নতুন গাড়ির সৌন্দর্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ
নতুন গাড়ির মালিকরা সাধারণত এর লুক, কন্ডিশন ও পারফরম্যান্স নিয়ে বেশি যত্নশীল হন। একদম নতুন গাড়িতে হালকা স্ক্র্যাচ বা ছোট ডেন্টও খুব বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, এই ছোট ক্ষতির মেরামতই অনেক সময় বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়।
বাম্পার টু বাম্পার ইন্সুরেন্স থাকার ফলে গাড়ির মালিকের মানসিক চাপ অনেক কম থাকে। তার জানা থাকবে যে সামান্য ক্ষতির ক্ষেত্রে বড় বিল আসবে না, ফলে গাড়িটি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখাও সহজ হয়।
এই অ্যাড-অন কি সত্যিই অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দেওয়ার মতো মূল্যবান?
অনেকেই ভাবেন, বাম্পার টু বাম্পার ইন্সুরেন্স নেওয়ার কি সত্যিই প্রয়োজন আছে? একদমই আছে। বিশেষ করে নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে এই অ্যাড-অন অনেক সময় খরচ সাশ্রয় করে। সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
মেরামতির খরচ কমে যায়:
আজকের আধুনিক গাড়িগুলোতে ফাইবার বাম্পার, সেন্সর, DRL হেডলাইট, ক্যামেরা, সাইড মিরর ইউনিট, এসবই থাকে এবং প্রতিটি অংশের দাম বেশ বেশি থাকে। একটি সাধারণ ধাক্কায় বাম্পার বা হেডলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত বা রিপ্লেসমেন্ট খরচ সহজেই কয়েক হাজার থেকে দশ হাজার টাকায় পৌঁছে যায়।
সাধারণ বিমায় ডেপ্রিসিয়েশন কেটে নেওয়া হয়, ফলে সেই খরচের অনেকটাই আপনাকে নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। কিন্তু বাম্পার টু বাম্পার ইন্সুরেন্স থাকলে নতুন পার্টসের পুরো দাম বা বেশিরভাগটাই ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দিয়ে দেয়। এর ফলে একবারের দুর্ঘটনাতেই আপনি যে টাকা বাঁচাতে পারেন, তা প্রায়শই অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের চেয়ে বেশি হয়ে যায়।
ইন্সুরেন্স ক্লেইম সিম্পল ও টেনশন-ফ্রি হয়:
সাধারণ বিমায় ডেপ্রিসিয়েশন কাটা, স্পেয়ার পার্টসের মূল্যহ্রাস নির্ধারণ, পারসেন্টেজ ক্যালকুলেশন ইত্যাদি কারণে ক্লেইম প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যায়। অনেক সময় মালিকের বুঝতেই সময় লাগে কত খরচ কতটা কভার হবে। এই ইন্সুরেন্স কভার থাকলে এই ঝামেলা অনেক কম হয়। হিসাব সোজা, প্রকৃত মেরামত খরচই কভার হয়। ফলে ক্লেইম প্রসেস দ্রুত, সহজ ও ঝামেলাহীন হয়।
গাড়ির কন্ডিশন ভাল থাকে, ফলে রিসেল ভ্যালুও বাড়ে
গাড়ি যখন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়, তখন যতটুকু ক্ষতি হয়, সেটি ঠিকমতো মেরামত করা জরুরি। কিন্তু যদি খরচ বেশি পড়ে, অনেক মালিকই সম্পূর্ণ রিপেয়ার না করে কাজ চালানোর চেষ্টা করেন, যেমন স্ক্র্যাচ রেখে দেওয়া, বাম্পার পুরো না বদলানো, বা হেডলাইট রিপেয়ার করে চালানো। বাম্পার টু বাম্পার কভার থাকলে মেরামত সঠিকভাবে করানো সহজ হয় কারণ অধিকাংশ খরচই কভার হয়। ফলে গাড়ি দীর্ঘদিন সুন্দর থাকে এবং পরবর্তীতে বিক্রি করার সময় ভাল দাম পাওয়া যায়।
অনলাইনে রিনিউয়াল করে সহজেই বাম্পার টু বাম্পার যুক্ত করা যায়:
বর্তমান সময়ে গাড়ির বিমা রিনিউ করা আর আগের মতো ঝামেলার নয়। প্রায় সব গাড়ির বিমা কোম্পানিই এখন অনলাইনে রিনিউ করার সুযোগ দেয়। ফলে ঘরে বসেই কয়েক মিনিটে আপনি পলিসি রিনিউ করতে পারবেন, এবং চাইলে বাম্পার টু বাম্পার কভারটিও সহজেই যোগ করতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই দ্রুত, সহজ এবং ঝামেলাহীন।
অনলাইনে রিনিউ করে এই অ্যাড-অন যুক্ত করার ধাপগুলো নিচে তুলে ধরা হল—
আপনার বিমা কোম্পানির ওয়েবসাইট বা অ্যাপে লগ-ইন করুন
প্রথম ধাপ হল, সেই বিমা কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ খুলে লগ-ইন করা। বেশিরভাগ সময় মোবাইল নম্বর ও OTP দিয়েই সহজে লগ-ইন করা যায়।
গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা পলিসি নম্বর দিন
লগ-ইন করার পর আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর অথবা আগের পলিসির নম্বর দিতে হবে। এতে সিস্টেম আপনার গাড়ির তথ্য এবং বর্তমান পলিসির ডিটেইলস তুলে আনবে।
“Renew Policy” অপশনে ক্লিক করুন
সঠিক তথ্য দিলে সরাসরি রিনিউ করার অপশন দেখাবে। সেখানে “Renew Policy” বোতামে ক্লিক করতে হবে। এখান থেকেই নতুন কভার বা অ্যাড-অন যোগ করা যায়।
Add-ons সেকশন থেকে Zero Depreciation নির্বাচন করুন
রিনিউ পেজে গেলে আপনি বিভিন্ন অ্যাড-অন দেখতে পাবেন। সেখান থেকেই Bumper to Bumper কভার নির্বাচন করতে হবে। অনেক কোম্পানি এটি আলাদা নামে দেখায়, যেমন “Zero Dep Cover”, “Nil Dep” ইত্যাদি।
প্রিমিয়াম দেখে অনলাইন পেমেন্ট সম্পন্ন করুন
পছন্দমতো কভার নির্বাচন করার পর পুরো প্রিমিয়াম দেখতে পাবেন। এরপর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, UPI, যেকোনও পদ্ধতিতে পেমেন্ট করতে পারবেন। অনলাইন পেমেন্ট সফল হলেই আপনার নতুন পলিসি অ্যাকটিভ হয়ে যাবে।
উপসংহার:
গাড়ি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যার সুরক্ষা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি। দুর্ঘটনা বা অঘটনে ছোট ক্ষতিও বড় খরচের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। Bumper to Bumper Insurance সেই আর্থিক চাপ কমিয়ে গাড়ির প্রকৃত মূল্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। নতুন গাড়ি, এবং শহরের রাস্তায় নিয়মিত চলাচলের জন্য এই কভার যথেষ্ট উপকারী। সামান্য অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিয়ে আপনি পেতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা।
