আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাত জেগে এসআইআর–এর কাজ করতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক বিএলও’র। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার অন্তর্গত দীঘা গ্রামে। মৃত ওই ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন (৫৫)। তিনি খড়গ্রামের ঝিল্লি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ১৪ নম্বর বুথে বিএলও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দীঘা গ্রামে একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
সূত্রের খবর গত কয়েকদিন ধরেই জাকির হোসেন এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশন করার জন্য রাত জেগে কাজ করছিলেন। সেই কাজ করার সময় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার আগেই বাড়িতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও এক কন্যা এবং দুই পুত্র রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
মৃত ওই বিএলও’র পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে এসআইআর–এর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই জাকির হোসেন গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে এনুমারেশন ফর্ম বিতরণ করেছিলেন এবং তারপর তা সংগ্রহ করে ডিজিটাইজেশন কাজ করছিলেন।
পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ খারাপ থাকায় এবং যে অ্যাপের মাধ্যমে বিএলও–দের ফর্ম ডিজিটাইজেশন করতে হচ্ছে তাতে সমস্যা দেখা দেওয়ার জন্য দিনের বেলায় তিনি এই কাজ করতে পারছিলেন না। ফলে গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই রাত বারোটার পর থেকে তিনি ফর্ম ডিজিটাইজেশন কাজ করছিলেন।
পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, নিজের সাধ্যমতো দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করলেও নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে তাঁকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। প্রতিদিন রাত জেগে কাজ করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জাকির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে এসআইআর–এর কাজ করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে নদিয়া জেলার চাপড়া এলাকায় এক বিএলও এসআইআর–এর কাজের চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি এসআইআর–এর কাজের চাপে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ২০ জন বিএলও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিএলও’র কাজ শেষ হলে ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কিনা এই আশঙ্কায় ইতিমধ্যে রাজ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। একাধিক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন।
বিএলও জাকির হোসেনের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে খড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক আশিস মার্জিত বলেন, ‘যে রাজ্যগুলোতে প্রকৃত এসআইআর করার দরকার সেখানে না করে বাংলাকে অপমানিত করতে, বাংলার মানুষকে অপদস্ত করতে এবং এখানকার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এখানে এসআইআর করছে।’
বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘এসআইআর–এর চাপে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৪১ জন মারা গিয়েছেন। জাকির হোসেন যেখানে বিএলও ছিলেন সেখানে প্রায় সাড়ে ৮০০ ভোটার রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই ৬৩৯ জন ভোটারের ফর্ম ডিজিটাইজেশন করার কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে তাঁকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হচ্ছিল। সেই কারণেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাঁর পরিবারের পাশে থাকবো।’
