শিল্পী চার
বাঁকুড়ার রতনপুর গ্রামে নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে পূজিত হন মহর্ষি নারদ। অন্য পুজোর থেকে আলাদা এই পুজোর মূল ভাবনা—বেকারত্বের যন্ত্রণা দেবলোকে পৌঁছে দেওয়া। ২০১৪ সালে গ্রামের কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক এই অভিনব পূজোর সূচনা করেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল নারদের মাধ্যমেই দেবতারা সবকথা শুনে তাঁদের জীবনের হিল্লে করে দেবেন।
মহর্ষি নারদ পূজো আজ শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, রতনপুর গ্রামের গর্ব ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখানে ভক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামবাসীর আশা, পরিশ্রম ও জীবনের লড়াইয়ের গল্প। বেকার যুবকদের যন্ত্রণা থেকে শুরু হওয়া এই পুজো আজ অনেকের জীবনে আলো এনেছে। এনেছে বিশ্বাস যে আন্তরিক প্রার্থনা ও ঐক্যের শক্তি সব বাধা কাটিয়ে দিতে পারে। তাই পুজো ঘিরে উৎসাহী সকলেই।
তাঁদের বিশ্বাস, দেবর্ষি নারদ ঈশ্বরের দূত। যিনি দেবদেবীদের কাছে মানুষের কথা পৌঁছে দেন। সেই ভাবনা থেকেই যুবকেরা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের বেকারত্বের কষ্ট নারদ মুনির মাধ্যমে দেবতাদের জানাবেন। আশ্চর্যের বিষয় স্থানীয়দের মতে, এই পূজো শুরুর পর থেকেই অনেক যুবক চাকরি পেয়েছেন—কেউ সরকারি, কেউ বা বেসরকারি ক্ষেত্রে। ফলে গ্রামের মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাতভর অঝোরে বৃষ্টি, তরতরিয়ে জল বাড়ছে পাহাড়ি নদীগুলিতে, বন্যার আশঙ্কায় কাঁটা স্থানীয়রা
প্রতি বছর নারদ বন্দনার সময় গ্রামজুড়ে যেন এক নতুন উদ্যম ছড়িয়ে পড়ে। ছোট থেকে বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে মিলে গড়ে তোলেন এক অনন্য সামাজিক বন্ধন। পুজোয় মেলা, যাত্রাপালা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সব মিলিয়ে রতনপুরে এই উৎসব যেন আশার প্রদীপ জ্বেলে দেয় প্রতিটি হৃদয়ে। এই পুজো শুধু রতনপুর গ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিও যুক্ত হয়েছে এই উৎসবে। সকলেই প্রার্থনা করেন, দেবতারা যেন নারদের মুখে সব কথা শুনে তাঁদের বেকারত্বের যন্ত্রণা ঘুচিয়ে দেয়। যা একসময় মাত্র সাত হাজার টাকার সামান্য বাজেটে, গ্রামের কয়েকজন যুবকের স্বপ্ন ও উদ্যোগে শুরু হয়েছিল, আজ তা রতনপুর গ্রাম ও আশপাশের এলাকার এক বিশাল মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে পুজোর বাজেট। প্রথম দিকে পুজোটি ছিল একেবারে সাধারণ। কিন্তু বছর ঘুরে মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর অংশগ্রহণে এই পূজো আজ এক সামাজিক উৎসবের রূপ নিয়েছে।
বর্তমানে তিন লক্ষ টাকার বিশাল বাজেটে হয় এই পুজো। শুধু গ্রামের মানুষ নয়, আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মানুষ আসেন এই অনন্য পুজো দেখতে। স্থানীয় ব্যবসারও রমরমা বাড়ে এই সময়ে—হাতে কাজ পান বহু মানুষ। অল্প টাকায় শুরু হওয়া এক বিশ্বাসের পুজো আজ রতনপুরের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠেছে। মহর্ষি নারদ পুজো তাই এখন শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি রতনপুরের ঐক্য, উন্নতি ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
প্রতিবছর নারদ বন্দনার সময় প্রতিটি মন্ত্রোচ্চারণে ধ্বনিত হয় জীবনের প্রেরণা ও নতুন সূচনার আহ্বান।
