আজকাল ওয়েবডেস্ক:  প্রকৃত ভোটারদের হয়রানি বন্ধ করে নির্ভুল ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরির দাবি তুলেছে সিপিআইএম। এবিষয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে একাধিক প্রস্তাব ও অভিযোগসহ ১৩ দফা সুপারিশপত্র জমা দিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই চিঠিতে তিনি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও পক্ষপাতহীন করার ওপর জোর দিয়েছেন।


চিঠিতে সেলিম প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ নজরদারি কমিটি গঠন করতে হবে, যাতে সংশোধনীর কাজের ক্ষেত্রে কোনও পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি না হয়। এর আগে এসআইআর সংক্রান্ত সর্বদলীয় বৈঠক এবং বাম দলগুলির যৌথ স্মারকলিপিতেও এই দাবি গুরুত্ব পেয়েছিল।


মহম্মদ সেলিমের মতে, এসআইআর প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নজরদারির সুযোগ না থাকলে প্রকৃত ভোটাররা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একই বিধানসভা কেন্দ্রে একাধিক বুথে একই বিএলএ (Booth Level Agent)-কে দায়িত্ব দেওয়ার অনুমতি থাকা উচিত। পাশাপাশি, বিএলও (Booth Level Officer) এবং বিএলএ–দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়েও তিনি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আরও পড়ুন: দুটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে তিনটি পৃথিবী, সামনে এল অবাক করা আবিষ্কার


চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তিবর্ষ হিসাবে ধরা যথাযথ নয়। তার সঙ্গে পরবর্তী বছরের তালিকাগুলিকেও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া, স্থানান্তরিত বা একাধিক জায়গায় নাম থাকা ভোটারদের তথ্য যাচাই করে সঠিক সংশোধন করা—এসব প্রক্রিয়া নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছেন সেলিম।


তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড বা জব কার্ডের মতো সরকারি নথি যেন ভোটারদের পরিচয়ের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম যাতে ভুলবশত বাদ না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে প্রত্যেককে যথাযথ নোটিশ ও শুনানির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।


সেলিমের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন সিএএ–সংক্রান্ত শিবির ও নাগরিকত্বদান বিষয়ক রাজনৈতিক প্রচার বন্ধ রাখা জরুরি। পাশাপাশি, কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশিকা সম্বলিত একটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নির্দেশিকা-পুস্তিকা প্রকাশের আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ভোটার তালিকা তৈরির দায় নাগরিকদের ঘাড়ে চাপানো অনুচিত। নির্বাচন কমিশনকেই সেই দায়ভার নিতে হবে এবং সমস্ত পরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সময়মতো জানিয়ে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিক ও ছাত্রছাত্রীদের নাম যেন অস্থায়ী অনুপস্থিতির কারণে বাদ না যায়, সেদিকেও নজর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন সেলিম।


চিঠির শেষে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভোটার তালিকা প্রক্রিয়ায় কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন, বিএলওদের পরিচয় স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয় এবং সবার জন্য একই ধরনের ভোটার পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়—এই বিষয়গুলিও নির্বাচন কমিশনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করে।


সিপিআইএম-এর দাবি—স্বচ্ছ, নির্ভুল ও নাগরিক-বান্ধব ভোটার তালিকা তৈরিতে নির্বাচন কমিশনকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারেন।