বীরভূমের বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাল শংসাপত্র কাণ্ডে কড়া পদক্ষেপ নিল কর্তৃপক্ষ। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপিকা জলি ভট্টাচার্যকে বহিষ্কার করল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিশ্ববাংলার  উপাচার্য দিলীপকুমার মাইতি আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজারের কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের সিলমোহর জাল করে অভিজ্ঞতার শংসাপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল জলি ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক ও বিক্ষোভ।

প্রসঙ্গত, এই অভিযোগের কেন্দ্রে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষানিয়ামক প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও অস্থায়ী ইংরেজি অধ্যাপিকা জলি ভট্টাচার্য। বিষয়টি জানাজানি হয় গত সেপ্টেম্বর মাসে। তারপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিকে অভিযুক্তদের হাতে, যেমন শো-কজ নোটিশ ধরানো হয়। অন্যদিকে তাঁদের সমর্থনে পড়ুয়াদের একাংশ সরব হন। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, জলি ভট্টাচার্য ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াই, যার বলি হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। আন্দোলনকারীরা প্রশাসনের অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে পোস্টার লাগিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই বিক্ষোভে বহিরাগতরা অংশ নিয়েছে, কিন্তু এই গন্ডগোলের ফলে ভর্তি প্রক্রিয়া ও পঠনপাঠন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অর্থাৎ জাল শংসাপত্র বিষয়টি সামনে আসতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি, রাজ্যের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ও একজন উচ্চপদস্থ প্রশাসক তথা অধ্যাপক ছিলেন। এ যাবৎ সেই তদন্ত প্রক্রিয়া চলার পর কমিটি অভিযুক্ত জলি ভট্টাচার্যকে দোষী প্রমাণিত করে। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। 

তাদের রিপোর্টের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই অধ্যাপিকাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে কথা সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন দিলীপবাবু। এর ফলে ক্যাম্পাসে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে, যদিও উপাচার্য জানিয়েছেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে নেওয়া হয়েছে এবং তদন্তের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন দিলীপবাবু। সেখানে তিনি বলেন, অধ্যাপিকা জলি ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে জাল শংসাপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক গুরুতর অভিযোগ ছিল। সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এছাড়া প্রসুনবাবু যে অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিলেন, তার বিষয়ে তাঁর সংশ্লিষ্ট কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর-সহ রাজ্যের রাজ্যপালকে অভিযোগ জানানো হবে। ওই অধ্যাপিকার আগামী চাকরি জীবনের কথা মাথায় রেখে তাঁর বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে কোনও আইনানুপ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছিল। 

এই ঘটনায় পাল্টা জলি ভট্টাচার্য বলেন, দিলীপবাবু আর বর্তমান উপাচার্য পদে নেই। তাই ওঁর এই সিদ্ধান্ত আর বৈধ নয়। তবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে এর শেষ দেখে ছাড়ব। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তিনি আইন মেনেই স্বাক্ষর করেছেন এবং অহেতুক বিতর্ক তুলে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা চলছে। প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।