মিল্টন সেন, হুগলি,২১ অক্টোবর: প্রায় আড়াইশ গ্রামের বেশি সোনা ও পাঁচশ গ্রামের বেশি রুপোর গয়না দিয়ে সাজানো। এবারেও পুজোয় বুক চিরে রক্ত দিয়েছেন ভক্তরা। মহাসাড়ম্বরে পুজো গ্রহণ করলেন পান্ডুয়ার মণ্ডলাইয়ের পথের মা। প্রাচীন রীতি মেনে আজও দীপান্বিতা অমাবস্যায় পান্ডুয়ার মন্ডলাই পথের মায়ের পুজো হয়। আনুমানিক ৪০০ বছরের প্রাচীন পুজো বলা হলেও প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সকলেরই অজানা।

একদা পান্ডুয়ার মন্ডলাই এলাকা ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ, জনশূন্য। মন্ডলাই-এর উপর দিয়ে তখন বয়ে যেত কঙ্ক নদী। সেই নদীর তীরেই ছিল শ্মশান। কথিত আছে সেই শ্মশান ছিল তৎকালীন সময়ে তন্ত্রসাধনার পীঠস্থান। সেখানেই এক তন্ত্রসাধকের হাত ধরে এই কালীপুজোর সূত্রপাত। জানাজায়, দীর্ঘ চার শতক আগের ঘটনা। এক কাপালিক এক রাতের মধ্যে দির্ঘাঙ্গি কালী প্রতিমা তৈরি করে, পুজো করতেন। আবার সেই রাতেই প্রতিমা বিসর্জনও করে দিতেন। সবটাই করতেন লোক চক্ষুর আড়ালে। তবে হঠাৎ এক বছর এক ব্রাহ্মণ কাপালিকের সেই ক্রিয়াকলাপ দেখে ফেলে ছিলেন। তারপর, ওই কাপালিক ওই ব্রাহ্মণের হাতে পুজোর সমস্ত কিছু সমর্পণ করে সেখান থেকে প্রস্থান করেন। নিখোঁজ হয়ে যান। সেই সময় থেকেই পুজো হয়ে আসছে। কালক্রমে সেই মূর্তি শ্মশান থেকে রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীকালে পুজো বারোয়ারী পুজোর রূপ ধারণ করে। পথের পাশে এই পুজো হয়ে আসায় এই কালির নাম হয়ে যায় পথের মা। প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় ধুমধাম করে ওখানে কালীপুজো হয়। বলিও দেওয়া হয়। বহু মানুষ দণ্ডী কাটেন। অনেকেই আবার নিজের বুক চিরে রক্ত দিয়ে পুজো করে থাকেন। যা আজও এই পুজোর প্রাচীন রীতি। পুজো উপলক্ষে গ্রামের বহু মানুষ আসেন।এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির বর্তমান সভাপতি শুভঙ্কর নন্দী বলেন, কাপালির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই পুজো। আগে শ্মশানকালি রূপে পুজা হতো। কবে থেকে এই পুজো শুরু তা তিনি জানেন না। তবে লোক মুখে কথিত কোনও এক কপালিক এক রাতের মধ্যেই মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করতেন, আবার সেই রাতেই প্রতিমা বিসর্জন করে দিতেন। সেই দৃশ্য দেখে ফেলেন এলাকার এক ব্রাহ্মণ। এরপর ওনার হাতেই এই পুজোর দায়িত্ব তুলে দিয়ে কাপালিক চলে যান। সেই থেকেই গ্রামবাসীরা এই পুজো করে আসছে। এখানে মাকে কুড়ি ভড়ি সোনা ও ৫০ ভরি রুপোর অলংকারে ভূষিত করা হয়। পুজোয় ছাগ ও ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়ার প্রথা আজও রয়েছে।
ছবি পার্থ রাহা।
