আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোলেনাথের চোখে জল। অলৌকিক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুর পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর সংলগ্ন জোড়াসাঁকো ক্লাবে। এলাকাটি বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বলে পরিচিত। সোমবার দীপাবলির আলোয় যখন গোটা শহর উৎসবের আবেশে মত্ত, ঠিক তখনই ঘটে যায় এমন এক রহস্যময় ঘটনা, যা মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দেখা যায়, এ বছর কালীপুজো না হওয়া সেই ক্লাব প্রাঙ্গণে স্থাপিত দেবাদিদেব মহাদেবের মূর্তির চোখ থেকে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে জল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, যেন স্বয়ং ভোলেনাথ তাঁর চোখের জলে জানিয়ে দিচ্ছেন গভীর এক বেদনার কথা, যার কারণ মানুষের অজানা।
স্থানীয়দের একাংশের মতে, এবছর ক্লাবে কালীপুজো বন্ধ হওয়াই এই অলৌকিক ঘটনার মূল কারণ। শাস্ত্রমতে, শিব ও কালী অবিচ্ছেদ্য — আদ্যাশক্তি কালী হলেন শিবের মহামায়া, আর শিব তাঁর অনন্ত শক্তির প্রতিরূপ। তাই মা কালীর পুজো না হলে মহাদেবের আরাধনাও অসম্পূর্ণ থাকে। ঠিক সেই বন্ধনই যেন শিথিল হয়েছিল এবছর, আর সেই শূন্যতাই ভোলেনাথের চোখের জল হয়ে নেমে এসেছে মাটিতে।
আবার অন্যদিকে, কেউ কেউ এটিকে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, দেবতার চোখে জল মানে প্রকৃতি কোনও বিপদের পূর্বাভাস দিচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আধ্যাত্মিক তত্ত্বও টানছেন অনেক ভক্ত। তাঁদের দাবি, শিব হলেন সংহার ও সৃষ্টি দুইয়েরই প্রতীক। যখন অন্যায়, অবমাননা বা অবহেলা চরমে পৌঁছায়, তখন তিনি নিজেই প্রতিক্রিয়া জানান—কখনও বজ্রের মতো, কখনও চোখের জলের মতো নীরবে।

ক্লাবের সদস্য ঝন্টু ভল্লা বলেন, “সন্ধেবেলায় মা কালীর পুজোর প্রস্তুতি একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়েই কয়েকজন সদস্য মন্দিরের পাশে থাকা ভোলেনাথের বাম চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে দেখেন। প্রথমে আমরা বিশ্বাসই করতে পারিনি। কিন্তু যখন দেখি সত্যিই ঠাকুরের চোখ বেয়ে জল পড়ছে, তখন সবাই চমকে উঠি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে মা কালীর আরাধনা শুরু করি।”
প্রত্যক্ষদর্শী সাথী দাস জানান, “কালীপুজোর ঠাকুর দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে এসে দেখি প্রচুর ভিড়। সবাই শিবঠাকুরের সামনে ছবি তুলছে। কাছে গিয়ে দেখি, সত্যিই ঠাকুরের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছিল যেন ভোলেনাথ কেঁদে উঠেছেন।”
আধ্যাত্মিক দিক থেকে দেখা যায়, শ্যামা কালীপুজো ও ভোলেনাথের উপাসনা একই তন্ত্রধারার সঙ্গে যুক্ত। অমাবস্যার রাত, শ্মশান ও তন্ত্রসাধনার সময়ই শিব ও কালী মিলিত হন শক্তি ও শান্তির প্রতীকে। তাই পুজো বন্ধ হওয়ায় যেন সেই চক্রে বিঘ্ন ঘটেছে— এমনটাই মনে করছেন অনেক ভক্ত।
এলাকাবাসী এখন ক্লাব প্রাঙ্গণে ভিড় করছেন দেবতার দর্শনে। কেউ প্রণাম করছেন, কেউ আবার মুঠোফোনে সেই দৃশ্য বন্দি করছেন। পণ্ডিতদের মতে, এই ধরনের ঘটনাকে নিছক কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শিবের চোখের জল আসলে ভক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ারই এক নিঃশব্দ বার্তা—ভক্তির বন্ধন যখন দুর্বল হয়, তখন প্রকৃতি নিজেই তার ভাষা খুঁজে নেয়।
অন্ধকার অমাবস্যার রাতে, আলোর উৎসবের মাঝেই ভোলেনাথের চোখে জল— এ কি কেবল কাকতালীয়, না কি কোনও গভীর আধ্যাত্মিক সংকেত? উত্তরটা এখনও রহস্যে ঢাকা, তবে একথা সত্য— এই ঘটনার পর বোলপুরবাসী যে নতুন করে ভক্তি, বিশ্বাস আর ভয়ের এক অনন্য মিশ্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি, তা বলাবাহুল্য।
