আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোট আসে, ভোট যায়—কিন্তু শূন্য আসনেই আটকে আছে সিপিএম। দীর্ঘ এক দশক ধরে বাংলার বিধানসভায় প্রতিনিধিত্বহীন এই বাম দল কি তবে নতুন কিছু ভাবছে? অন্তত রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সাম্প্রতিক মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই মিলছে। তিনি দাবি করেছেন, সিপিএম ইতিমধ্যেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা প্রস্তুতের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। শুধু মীনাক্ষী মুখার্জি, সৃজন ভট্টাচার্যর মতো পরিচিত ছাত্র-যুব মুখ নয়, তালিকায় থাকছে আরও ‘চমক’।
এই ‘চমক’ ঠিক কী—তা নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে। বিশেষ করে সেলিমের মন্তব্য অনুযায়ী, টলিপাড়া থেকে ‘কম-বেশি সব বয়েসের’ মানুষকে প্রার্থী করার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। টলিগঞ্জের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দেবদূত ঘোষ, মানসী, রাহুলদের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখকে ঘিরে আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, ছোটপর্দা কিংবা বড়পর্দার তারকারা যদি সত্যিই বাম রাজনীতিতে যুক্ত হন, তবে তা রাজ্যের রাজনীতির গতিপথে সামান্য হলেও আলোড়ন তুলতে পারে।
দলের এক অভিজ্ঞ কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, “সিপিএমের অতীত ঐতিহ্য আছে। এই মুহূর্তে কঠিন পরিস্থিতিতে যদি কোনও সাংস্কৃতিক মুখ দলকে ভরসা দিতে চায়, সেটা ইতিবাচক বলেই মনে করি।” অন্যদিকে এক তরুণ শিল্পী জানান, “পার্টি যদি আমায় ভাবে, আমি অবশ্যই বিবেচনা করব। এই সময়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়াটা সামাজিক দায়িত্বও বটে।”
তবে এই পদক্ষেপের পেছনে কেবলমাত্র ‘চমক’ নয়, একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ছাত্র-যুব নেতৃত্বের একাধিক বিতর্কিত ঘটনার পর সিপিএম যে ভাবমূর্তি ঘোরাতে চাইছে, তা স্পষ্ট। আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনিই বারংবার বলে এসেছেন—বৃদ্ধ তন্ত্রের দিন শেষ, এবার তরুণ প্রজন্মকে জায়গা দিতে হবে।
সিপিএমের বর্তমান অবস্থান শূন্য, কিন্তু লক্ষ্য এক। সেই ১—যা বামেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রতীকী হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রশ্ন উঠছে, এবার কি তবে ভাগ্যের গেরো খুলবে? নাকি শুধু তারকাদের নামেই থেমে থাকবে এই চমক? ভোট এখনও এক বছর দূরে, কিন্তু আলিমুদ্দিন ইতিমধ্যেই খেলা শুরু করে দিয়েছে—এবং এই খেলার ফল রাজ্যের ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটা সময়ই বলবে।
আরও পড়ুন: 'বাবার মতো পাত্র চাই', খুঁজে না পাওয়ায় বাবার সঙ্গেই সাত পাক ঘুরলেন মেয়ে! ছিঃ ছিক্কার গ্রামবাসীদের
২০১১ সালের পর থেকে সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কে চূড়ান্ত বিপর্যয় নেমে এসেছে। একের পর এক নির্বাচনে শূন্য আসনে থমকে থাকা দলটি জনগণের আস্থা ফিরে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক আন্দোলন—কখনও বেকারত্ব, কখনও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কিংবা কৃষকস্বার্থ নিয়ে—সবই ছিল মূলত ছাত্র-যুব নেতৃত্বনির্ভর। কিন্তু এসবেই জনমনে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি সিপিএম। পুরনো কাঠামো ভেঙে ফেললেও এখনও তারা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে বামপন্থার ঐতিহাসিক শক্ত ঘাঁটি আজ জনবিচ্ছিন্ন, আর প্রশ্ন উঠছে—বামেদের পুনরুত্থান আদৌ সম্ভব কি না।
