আমাদের শরীরে এমন অনেক অঙ্গ রয়েছে, যারা নীরবে প্রতিদিন আমাদের সুস্থ রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে চলে। কিডনি তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বেশিরভাগ মানুষ হার্ট, মস্তিষ্ক বা ফুসফুস নিয়ে কথা বললেও কিডনির গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন এতে কোনও সমস্যা শুরু হয়। কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে ধীরে ধীরে পুরো শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই কিডনির কার্যকারিতা বোঝা এবং তার সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তাহলে প্রশ্ন হল, শরীরে কিডনির কাজ কী? আর কিডনি সুস্থ রাখতে কী করা উচিত? জেনে নেওয়া যাক।
কিডনি আমাদের শরীরে একটি ফিল্টারের মতো কাজ করে। এটি রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীরের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে বার করে দেয়। পাশাপাশি কিডনি শরীরে জল, লবণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখে। এই ভারসাম্য নষ্ট হলে শরীরে ফোলা, ক্লান্তি, দুর্বলতা ও নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
আয়ুর্বেদে কিডনির গুরুত্ব
আয়ুর্বেদে কিডনিকে ‘বৃক্ক’ বলা হয়। আয়ুর্বেদ মতে, কিডনি শরীরের শক্তি ও জীবনীশক্তির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। কিডনি সুস্থ থাকলে শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে, রক্ত পরিষ্কার থাকে এবং বিষাক্ত উপাদান সঠিকভাবে বেরিয়ে যায়। ফলে মানুষ নিজেকে বেশি সক্রিয়, কম ক্লান্ত এবং সুস্থ অনুভব করে।
কিডনির রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, শুরুর দিকে এর লক্ষণ স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। অনেক সময় মানুষ একেবারেই স্বাভাবিক অনুভব করে, কিন্তু ভিতরে ভেতরে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। যখন অতিরিক্ত ক্লান্তি, হাত-পা ফুলে যাওয়া, খুব বেশি বা খুব কম প্রস্রাব হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তখন কিডনির অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যায়। তাই রোগ হওয়ার আগেই কিডনিকে সুরক্ষিত রাখা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
কিডনি সুস্থ রাখার উপায়
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
কিডনি ভাল রাখতে সবচেয়ে জরুরি হল সঠিক খাবার। অতিরিক্ত ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও বাইরের খাবার কিডনির উপর বাড়তি চাপ ফেলে। ফল, সবজি, ডাল, ভাত, রুটি এবং অল্প পরিমাণে দুধ বা দই শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। অতিরিক্ত নুন, চিনি ও জাঙ্ক ফুড খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
পর্যাপ্ত জল পান করুন
কিডনির সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত জল পান করা অত্যন্ত জরুরি। যথেষ্ট জল খেলে শরীরের বর্জ্য সহজেই বেরিয়ে যায় এবং কিডনি স্টোনের ঝুঁকি কমে। অ্যালকোহল, সফট ড্রিঙ্ক ও অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় কিডনির ক্ষতি করতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভাল।
নিয়মিত ব্যায়াম
শারীরিক সক্রিয়তাও কিডনির স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রতিদিন সামান্য হলেও ব্যায়াম বা হাঁটাচলা উপকারী। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ওজন বাড়ে না এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।নযেগুলো কিডনির সবচেয়ে বড় শত্রু। যোগব্যায়াম, দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো বা দিনে অন্তত ৩০ মিনিট সক্রিয় থাকা কিডনিকে সুস্থ রাখে।
মানসিক চাপ কমান
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বেশি দুশ্চিন্তা করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা কিডনির উপর প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো ঘুমানো, মন ভাল রাখা, গভীর শ্বাস নেওয়া ও মানসিক শান্তি বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
