আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকার উপর ভিত্তি করে এই সংশোধনী চলছে। ইতিমধ্যেই ৫৬ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে ভোটার তালিকা থেকে। ১ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। পশ্চিমবঙ্গে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সোমবার রাজ্যের ২০০২ সালের ভোটার তালিকা প্রকাশ করা শুরু করল কমিশন। আপাতত ১১টি জেলার বিধানসভা কেন্দ্রগুলির ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে এই তালিকা দেখা যাবে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।

কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ২০০২ সালের এসআইআর ভোটার তালিকা নামে ওই তালিকা দেখা যাবে। বিহারেও কমিশন ২০০৩ সালের তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকা মেনেই এসআইআর চলছে বাংলার প্রতিবেশী রাজ্যে। যদিও বাংলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে নিবিড় সংশোধনী চালু হয়েছে কি না সেই বিষয়ে কিছু জানায়নি কমিশন। সূত্রের খবর, রাজ্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বা জেলাশাসক (ডিইও), অতিরিক্ত জেলাশাসক, ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার, অতিরিক্ত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) এই সমীক্ষার কাজ করবেন। সেই অনুযায়ী তাঁদের প্রশিক্ষণের কাজও শুরু হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত জঙ্গিরাই পহেলগাঁওয়ের হামলাকারী, মিলেছে পাক ভোটার কার্ড এবং চকোলেট, লোকসভায় জানালেন অমিত শাহ

নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজ্যগুলিতে এসআইআর করে কমিশন। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে শেষবার রাজ্যগুলিতে এসআইআর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভোটার তালিকায় থাকা নামগুলির মধ্যে কারা মৃত, কারা অন্যত্র চলে গিয়েছে তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখে কমিশন। বিহারে জুন মাস থেকে চলছে সেই প্রক্রিয়া। ১ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত এসআইআর তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের নথি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যাঁদের অভিভাবকের নাম সেই তালিকায় রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ২০০২ সালের তালিকায় যাঁদের নাম থাকবে না, তাঁদেরই পারিবারিক এবং এ দেশের নাগরিকত্বের সূত্র বুঝতে নথি যাচাই করা হবে। সেই তালিকায় যাঁদের নাম নেই, নতুন ভোটার বা অন্য রাজ্য থেকে চলে আসা কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে পৃথক ফর্ম এবং নথি দাখিল করতে হবে।

বিহারে এসআইআর নিয়ে ইতিমধ্যেই মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে। সোমবারের শুনানিতে বিচারপতির বেঞ্চ কমিশনকে প্রশ্ন করে যে, আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? এসআইআর-এ কোন কোন নথি বিবেচনা করা হবে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল কমিশন। সেখানে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ডের মতো সহজলভ্য নথি রাখা হয়নি। আদালত নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করে, "আপনারা কি আধার এবং ভোটার কার্ড গ্রহণ করবেন?" আদালতে পর্যবেক্ষণ, "কমিশনের  তালিকা অনুযায়ী, তালিকার কোনও নথিই চূড়ান্ত নয়। আপনি যদি ভোটার কার্ড সহ ফর্ম আপলোড করেন বা আধার সহ, তাহলে আধার হল পরিচয়ের প্রমাণ।"

আরও পড়ুন: অলীক স্বপ্ন দেখছে না কি! বছরে পাঁচ হাজার কেজি সোনা তৈরির দাবি করল মার্কিন সংস্থা, কিন্তু কীভাবে?

বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “পৃথিবীর যে কোনও নথি জাল করা যেতে পারে।” দুই বিচারপতির বেঞ্চের আবার প্রশ্ন, “আপনারা আধার এবং ভোটার কার্ড কেন গ্রহণ করছেন না?” কমিশন জবাবে বলে, “আমরা বলছি আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়... তবে যে কেউ পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে আধার দাখিল করতে পারেন। আমাদের ফর্মে বলা আছে আপনার আধার নম্বর দিন।” বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এই দু’টি নথি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। আগামিকাল হয়তো দেখবেন, শুধু আধার নয়, ১১টি নথিই জাল করা যাচ্ছে। সেটা অন্য সমস্যা। কিন্তু আমরা গণহারে নাম বাদ দিচ্ছি। গণহারে নাম তো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আপনারা দয়া করে আধার কার্ড অন্তর্ভুক্ত করুন।’’

সংশোধন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিহারে ভোটার তালিকা থেকে ৬৬ লক্ষ নাম বাদ যেতে পারে। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত, ৩৬ লক্ষ অন্যত্র চলে গিয়েছেন বা খোঁজ নেই, সাত লক্ষের একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে এবং এক লক্ষ সময়ের মধ্যে নথি জমা দেননি। এই বিশাল সংখ্যক নাম মুছে ফেলা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংখ্যালঘু, দলিত ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ভোটারদের বাদ দেওয়ার চক্রান্ত। আর তা করা হচ্ছে বিজেপির নির্বাচনী সুবিধার জন্য। এই ইস্যুতে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিরোধীরা ক্রমাগত আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সভাপতির পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক আলোচনা অনুমোদন না পাওয়ায় লোকসভা ও রাজ্যসভা বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।