আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোটা পৃথিবী এখনও আধুনিক হয়ে গিয়েছে। বাদ যায়নি তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভারতবর্ষও। শুধু শহর নয়, গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গিয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু এই তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট একটি গ্রাম। বলা হয়, আজও আধুনিকতার ঢেউ স্পর্শ করতে পারেনি বাংলার বাঁকুড়া জেলার এক ছোট্ট গ্রামকে।
বর্তমানে বাংলার ঘরে ঘরে জল সরবরাহের পাইপলাইন পৌঁছে গেলেও এই গ্রামের বাসিন্দাদের আস্থা এখনও একটাই- গ্রামের ‘ঠাকুর পুকুর’। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রোডের ধারে শান্ত-নিবিড় বেলবনি গ্রামেই এই আশ্চর্য পুকুরের অবস্থান।
যার জলের উপর নির্ভর করে গোটা গ্রামের জীবনযাত্রা। যতই ঘরে ঘরে জল সরবরাহ হোক, এখনও প্রত্যেক দিন ভোর হতেই পুকুরপাড়ে জমে যায় গ্রামবাসীর ভিড়। কেউ কলসি, কেউ বোতল, কেউ আবার বালতি হাতে জল তোলেন।

কেউ রান্নার জন্য, এমনকি অনেকে পানীয় জল হিসেবেও সরাসরি এই পুকুরের জলই ব্যবহার করেন বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি। গ্রামে টাইম কল থাকলেও সেই জলের প্রতি মানুষের ভরসা নেই।
রান্না থেকে শুরু করে পানীয় জল ব্যবহার করা, সবক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় ঠাকুর পুকুরের জল। আজও এই জলকেই চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের দাবি, এই জলেই নাকি রান্না হয় সবচেয়ে ভাল। সবচেয়ে বড় বিষয় এতদিন ধরে এই জল খেয়ে কেউই অসুস্থ হননি।
তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, ঠাকুর পুকুরের জলে রয়েছে দেবতার আশীর্বাদ ও পবিত্রতা। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পুকুরের জলই তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এই পুকুরের জল খেতে মেনে চলতে হয় কড়া নিষেধাজ্ঞা। সেই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলতে হয় গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এই পুকুরে স্নান, কাপড় কাচা বা বাসন মাজা একেবারেই নিষিদ্ধ। এই জল তাঁদের কাছে কেবল প্রয়োজন নয়, এটি বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। গ্রামবাসী সীমান্ত দেব বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা এই পুকুরের জল ব্যবহার করে আসছি। আজও গোটা গ্রাম এই জলেই নির্ভর করে। পাইপলাইনের জল থাকলেও কেউ সেটা ব্যবহার করে না। ঠাকুর পুকুরের জলেই আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে।’
