আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকালে পার্কে, বাড়ির ছাদে বা মন্দিরের চাতালে ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রাকে শস্যদানা খাওয়াচ্ছেন কোনও সহৃদয় ব্যক্তি- এই দৃশ্য কলকাতা-সহ বহু শহরেই অতি পরিচিত। অনেকেই পুণ্যার্জন বা নিছক জীবপ্রেমের বশে এই কাজ করে থাকেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই আপাত নিরীহ অভ্যাসটির পিছনেই দেখছেন মারাত্মক বিপদের সঙ্কেত। চিকিৎসকদের মতে, পায়রাদের খাবার খাওয়ানো কেবল পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে না, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

পায়রাদের খাবার খাওয়ানোর ফলে তাদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে, যা বাস্তুতন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সহজলভ্য খাবারের কারণে পায়রা স্বাভাবিকভাবে খাবার খোঁজার অভ্যাস হারিয়ে ফেলে এবং মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে, নির্দিষ্ট জায়গায় অতিরিক্ত পায়রার ভিড় হয়। তাদের বিষ্ঠা বা বর্জ্য থেকে শুধু রোগই ছড়ায় না, তা স্থাপত্য, ঐতিহাসিক সৌধ এবং বাড়ির পরিকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি করে। এই বর্জ্যে থাকা ইউরিক অ্যাসিড কংক্রিট এবং ধাতব কাঠামো ক্ষয় করে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত বিষ্ঠা পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর করে তোলে।

পায়রা থেকে ছড়ায় কোন কোন রোগ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, পায়রার বিষ্ঠা, পালক থেকে একাধিক মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে।

১। হিস্টোপ্লাজমোসিস: এটি একটি ছত্রাকঘটিত রোগ। পায়রার শুকনো বিষ্ঠার গুঁড়োতে জন্মানো এক প্রকার ছত্রাক (হিস্টোপ্লাজমা ক্যাপস্যুলাটাম) বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। এর উপসর্গগুলি অনেকটা ফ্লু বা যক্ষ্মার মতো, যেমন-জ্বর, কাশি এবং বুকে ব্যথা।
২। ক্রিপ্টোকোকোসিস: এটিও একটি ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ। এই ছত্রাকটিও পায়রার বিষ্ঠায় পাওয়া যায় এবং শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এটি তেমন মারাত্মক না হলেও, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি ফুসফুস থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে মেনিনজাইটিসের মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
৩। সিটাকোসিস: এটি ‘প্যারট ফিভার’ নামেও পরিচিত। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যা পায়রা-সহ অন্যান্য পাখির থেকে ছড়াতে পারে। এর প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল জ্বর, গায়ে ব্যথা, শুকনো কাশির মতো নিউমোনিয়ার লক্ষণ।
৪। ই. কোলাই ও সালমোনেলা: পায়রার বিষ্ঠা থেকে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং পানীয় জলের উৎস বা খাবারকে দূষিত করতে পারে। এর ফলে ডায়েরিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং পেটের মারাত্মক রোগ হতে পারে।
৫। অ্যালার্জি ও অ্যাজমা: পায়রার পালক এবং শুকনো বিষ্ঠার গুঁড়ো বাতাসে মিশে অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যালার্জির উদ্রেক করে। এর ফলে হাঁচি, কাশি, চোখ-নাক দিয়ে জল পড়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম (যেমন ক্যানসার বা এইচআইভি আক্রান্ত রোগী), তাঁদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণগুলি প্রাণঘাতীও হতে পারে।