ভারতের সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোয় ২০২৫ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অপেক্ষায় থাকা দেশের পেনশন ব্যবস্থা এই বছর কার্যত এক ‘রিসেট’-এর মধ্য দিয়ে গেল।
2
10
পরিবর্তিত জনসংখ্যা, ক্রমবর্ধমান আয়ু, আর্থিক চাপ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা। এই সব বিষয় মিলিয়েই ২০২৫ সালকে ভারতের পেনশন নীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট করে তুলেছে।
3
10
গত এক দশকে ভারতের কর্মক্ষম মানুষের গঠন দ্রুত বদলেছে। সংগঠিত ক্ষেত্রের বাইরে বিপুল সংখ্যক কর্মী থাকায় দেশের বড় অংশই দীর্ঘদিন পেনশন সুরক্ষার বাইরে ছিল।
4
10
২০২৫ সালে সরকার এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে পেনশন ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করার দিকে জোর দেয়। ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমের কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, স্বনিযুক্ত ও গিগ ওয়ার্কারদের জন্য সহজ অধিকার পেনশন ব্যবস্থার চরিত্র বদলাতে শুরু করে।
5
10
এই সময়েই পুরনো পেনশন ব্যবস্থা বনাম নতুন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক নতুন মোড় নেয়। ২০২৫ সালে কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, অবিনিয়োগযোগ্য ও পুরোপুরি সরকারি অর্থনির্ভর পেনশন মডেল দীর্ঘমেয়াদে আর্থিকভাবে টেকসই নয়।
6
10
ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্মীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাইব্রিড বা সংস্কারকৃত পেনশন কাঠামোর দিকে ঝোঁক বাড়ে। সেই কাজকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
7
10
একই সঙ্গে ২০২৫ সালে পেনশন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ভূমিকা আরও শক্তিশালী হয়। ডিজিটাল কেওয়াইসি, একক পেনশন অ্যাকাউন্ট, স্বচ্ছ ফান্ড ট্র্যাকিং এবং রিয়েল-টাইম তথ্যপ্রবাহ পেনশন ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে।
8
10
শহর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের কাছে পেনশনকে আরও সহজবোধ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাই ছিল এই রিসেটের অন্যতম লক্ষ্য। এটি ২০২৬ সালে নতুন দিক নিয়ে আসবে।
9
10
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ২০২৫ সাল গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি ও সামাজিক ব্যয়ের চাপের মধ্যে সরকার বুঝতে পারে যে, পেনশন সংস্কার শুধু সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্ন নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত। দীর্ঘমেয়াদে সঞ্চয় বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল অর্থপ্রবাহ এবং প্রবীণদের আর্থিক নিরাপত্তা—এই তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়েই পেনশন রিসেটের রূপরেখা তৈরি হয়।
10
10
সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল ভারতের পেনশন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। এটি শুধু নীতিগত পরিবর্তনের বছর নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বেশি দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও টেকসই সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর দিকে দেশের অগ্রযাত্রার বিন্দু।