লিভার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। খাবার হজম করা, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করা এবং শক্তি জোগানোর কাজে লিভারের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, মদ্যপান ও শরীরচর্চার অভাবে অনেকেই অজান্তে আক্রান্ত হচ্ছেন ফ্যাটি লিভার সমস্যায়। ফ্যাটি লিভার তখনই হয়, যখন লিভারের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমতে শুরু করে। এটি ধীরে ধীরে লিভারের কাজের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে লিভার সিরোসিস বা গুরুতর লিভার রোগের ঝুঁকিও থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগ অনেক সময় নীরবে বাড়ে, তবে তার কয়েকটি সতর্ক সংকেত মুখে ফুটে ওঠে।
১. চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়াঃ ফ্যাটি লিভার হলে লিভার ঠিকভাবে রক্ত পরিষ্কার করতে পারে না। ফলে চোখের সাদা অংশ ও মুখের ত্বক ধীরে ধীরে হলুদ রঙের হতে পারে। একে জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণও বলা হয়।
২. মুখ ও চোখের নিচে ফোলা ভাবঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন মুখ ফোলা বা চোখের নিচে অস্বাভাবিক ফোলাভাব, তাহলে সেটি হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। লিভার ঠিকমতো প্রোটিন তৈরি করতে না পারলে শরীরে জল জমে এই ধরনের ফোলাভাব দেখা দেয়।
৩. হঠাৎ ব্রণ ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকঃ বয়স বাড়লে হঠাৎ করে মুখে ব্রণ বেড়ে যাওয়া বা ত্বক খুব বেশি তেলতেলে হয়ে গেলে তার পেছনে লিভারের সমস্যা থাকতে পারে। ফ্যাটি লিভারে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার প্রভাব ত্বকে পড়ে।
৪. মুখে লালচে দাগ বা সূক্ষ্ম লাল শিরাঃ অনেক সময় গালে বা নাকের চারপাশে লাল শিরার মতো দাগ দেখা যায়। একে ‘স্পাইডার ভেইন’ বলা হয়। এটি দীর্ঘদিনের লিভার সমস্যার একটি পরিচিত লক্ষণ।
৫. ত্বক শুষ্ক হওয়া ও কালচে দাগঃ লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর ভিটামিন শোষণ করতে পারে না। ফলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়, মুখে কালচে প্যাচ বা দাগ পড়তে পারে।
লিভার ভাল রাখতে ভাজা, তেল-মশলাযুক্ত খাবার কম খান। চিনি ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা শরীরচর্চা করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
মনে রাখবেন, মুখের পরিবর্তন শুধু সৌন্দর্যের বিষয় নয়, অনেক সময় তা শরীরের গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই এসব লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
