পেটব্যথাকে অনেকেই সাধারণ গ্যাস, হজমের সমস্যা বা সামান্য অস্বস্তি ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, হালকা ব্যথা অল্প সময় অনুভব হলেও দীর্ঘস্থায়ী বা হঠাৎ তীব্র ব্যথা শরীরে মারাত্মক অসুখের ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষত যখন পেটব্যথার সঙ্গে জ্বর, বমি, রক্তপাত, তীব্র অস্বস্তি বা মল-প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন দেখা দেয়, তখন অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ পেটব্যথার পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে একাধিক জটিল অসুখ। জেনে নেওয়া যাক সেই বিষয়ে-
১. পেপটিক আলসারঃ পেটের ভেতর বা ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশে ক্ষত তৈরি হলে তাকে বলা হয় পেপটিক আলসার। এক্ষেত্রে খাওয়ার পর বা রাতে পেটের ওপরের অংশে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে বুক জ্বালা, ফোলাভাব, অস্বস্তি, কখনও বমি বা রক্তবমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সময় মতো চিকিৎসা না করলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত বা আলসার ফেটে গিয়ে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সারাদিনে কতটা জল খাওয়া উচিত? পুরুষ-মহিলার শরীরে কি একই পরিমাণ জল দরকার? বেশি খেলেই মারাত্মক বিপদ
২. পিত্তথলিতে পাথরঃ পিত্তথলিতে ছোট পাথর জমে গেলে তা পিত্তরসের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। সাধারণত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার পর পেটে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব, জ্বর, দীর্ঘমেয়াদে লিভার বা পিত্তথলির সংক্রমণ হতে পারে। সময়মতো ধরা না পড়লে জটিল অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করতে হতে পারে।
৩. ডিভার্টিকুলাইটিসঃ বয়স বাড়লে অন্ত্রের দেওয়ালে ছোট ছোট স্যাক বা থলে তৈরি হয়। এগুলোতে সংক্রমণ হলে তাকে ডিভার্টিকুলাইটিস বলা হয়। নিচের দিকে বাঁ পেটে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়াও জ্বর, বমি, দুর্বলতা, মল-প্রস্রাবে পরিবর্তন,গুরুতর ক্ষেত্রে অন্ত্র ফেটে যাওয়া বা ফোঁড়া তৈরি হতে পারে। যা জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া নিরাময় সম্ভব নয়।
৪. পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজঃ এটি মূলত মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ, সাধারণত যৌনবাহিত জীবাণুর কারণে হয়। পেটের নিচের দিকে ব্যথা, অস্বাভাবিক যোনি স্রাব, যৌন মিলনের সময় ব্যথা, প্রস্রাবের সময় জ্বালা হতে পারে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, বন্ধ্যাত্ব কিংবা গর্ভধারণের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৫.প্যানক্রিয়াটাইটিসঃ অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হলে হয় প্যানক্রিয়াটাইটিস। অগ্ন্যাশয় হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়, তীব্র পেটব্যথা যা পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে, খাওয়ার পর অস্বস্তি, বমি। দীর্ঘস্থায়ী হলে অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই সমস্যা হঠাৎ অথবা দীর্ঘমেয়াদে হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
পেটব্যথাকে সাধারণ গ্যাস ভেবে অবহেলা না করে শরীরের অন্যান্য সতর্ক সংকেতের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। সময়মতো চিকিৎসা করলে মারাত্মক অসুখ থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে পেটব্যথার সঙ্গে বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন-
• হঠাৎ ও অত্যন্ত তীব্র ব্যথা শুরু হলে
• কয়েক ঘণ্টার বেশি ব্যথা চলতে থাকলে
• জ্বর, বমি বা রক্তপাত হলে
• চোখ বা চামড়ায় হলুদ ভাব দেখা দিলে
• ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে
