আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাণিজ্যে চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনায় বসতে চলেছে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জানা গিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার দিল্লিতে শুরু হবে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন রাশিয়া থেকে তেল কেনার জেরে। সেই উত্তেজনার পর ধীরে ধীরে নরম হয়েছে ওয়াশিংটনের সুর। আর তারই প্রেক্ষিতে ফের আলোচনার পথ খুলছে। খবরে জানা গিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন সাউথ এশিয়ার ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের হয়ে আলোচনায় বসবেন বাণিজ্য মন্ত্রকের শীর্ষকর্তা রাজেশ আগরওয়াল। সূত্রের খবর, দিনভর বৈঠক চলবে। গত সপ্তাহেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারতকে নিয়ে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। পাল্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই আলোচনাই ‘ভারত-আমেরিকা অংশীদারিত্বের সীমাহীন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে’। উল্লেখ্য, আগস্টের ২৭ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া শুল্কের জেরে দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তি প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এর আগে পাঁচ দফা আলোচনা শেষ হয়েছে। ষষ্ঠ দফা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ২৫-২৯ অগাস্টের মধ্যে, কিন্তু তা পিছিয়ে যায়।
দু’দেশই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই অন্তর্বর্তী চুক্তি শেষ করবে। কিন্তু কৃষি ও দুধের বাজারে ঢোকা নিয়ে আমেরিকার জোর দাবি ভারতের কাছে ছিল লাল দাগ। যার ফলে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সোমবার মন্তব্য করেন, ‘ভারত আলোচনার টেবিলে আসছে’। মার্কিন প্রতিনিধিদল দিল্লি পৌঁছনোর আগে তাঁর এই মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, ট্রাম্প এর আগে ভারতীয় পণ্যের উপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্কের উপরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিলেন। নাভারো অভিযোগ তুলেছিলেন, রাশিয়ার যুদ্ধে মুনাফা করছে ভারত, আর ভারত হয়ে উঠেছে ক্রেমলিনের ‘মানি লন্ড্রি সেন্টার’। তবে নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের তেল সংক্রান্ত বাণিজ্য কোনও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে না। পাল্টা অভিযোগে ভারতীয় কূটনীতিকরা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা নিজেরাই এখনও রাশিয়া থেকে বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনছে।
শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “দেখুন, ভারত ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছি, কারণ তারা রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। এটা কোনও সহজ ব্যাপার নয়। এটি বড় একটি পদক্ষেপ, আর এতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি ইতিমধ্যেই অনেক কিছু করেছি। আর মনে রাখবেন, এটা ইউরোপের সমস্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।” ট্রাম্প ফের একবার নিজের কাজের তারিফ করতে গিয়ে বলেন, “আমি সাতটা যুদ্ধ সমাধান করেছি। আমি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার উত্তেজনাসহ অনেক কিছু সমাধান করেছি। যেগুলো অসম্ভব মনে করা হত যেমন কঙ্গো আর রুয়ান্ডা। আমি তা সমাধান করেছি। এটি ৩১ বছর ধরে চলছিল, লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। আমি এমন যুদ্ধও শেষ করেছি, যেগুলোকে বলা হত সমাধান অযোগ্য।” এদিকে, ভারত তাদের রুশ তেল কেনা নিয়ে অবস্থান রক্ষা করে বলেছে যে দেশের জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত সর্বদা জাতীয় স্বার্থ এবং বাজারের বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই নেওয়া হয়।
এর আগে, ভারতের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের মনোনীত পরবর্তী রাষ্ট্রদূত সার্জিও গর বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেন, মার্কিন প্রশাসন চায় ভারত আমেরিকান অপরিশোধিত তেল এবং তেলজাত পণ্য কিনুক। তিনি উল্লেখ করেন, চলতি বাণিজ্য আলোচনাগুলোও মূলত সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। গর জোর দিয়ে বলেন, ভারতের ১৪০ কোটিরও বেশি জনগণ এবং দ্রুত সম্প্রসারিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করছে। অন্যদিকে, এর একদিন আগে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন যে, ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত এগোতে পারে, যদি নয়াদিল্লি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে। লুটনিক বলেন, “আসলে আমরা ভারতের ব্যাপারটা সমাধান করব, সেখানে বিশেষ কোনও সমস্যা হবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভর করছে ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করছে কিনা তার ওপর।
