আজকাল স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু শুধু বাড়তি মেদ নয়, মাত্রাতিরিক্ত রোগা হওয়াও যে চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চমকে দেওয়া তথ্য। 

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস সম্মেলনে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত রোগা হওয়া অনেক সময়ে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। গবেষকরা ডেনমার্কের প্রায় ৮৫ হাজার  মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল প্রায় ৬৬ বছর। তাঁদের বডি মাস ইনডেক্স অর্থাৎ বিএমআই অনুযায়ী ওজনের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে মৃত্যুহার তুলনা করা হয়।

 আরও পড়ুনঃ প্লাস্টার-অপারেশন নয়, মাত্র ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাবে ‘আঠা’! যুগান্তকারী আবিষ্কারে অবাক করলেন বিজ্ঞানীরা

ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁদের বিএমআই  ১৮.৫- এর নিচে অর্থাৎ যাঁকা অতিরিক্ত রোগা, তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি স্বাভাবিক ওজনের মানুষের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এমনকী যারা স্বাভাবিক ওজনের নিম্ন সীমায় ছিলেন (বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২২.৫), তাঁদেরও ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। অপরদিকে, যাঁদের ওজন কিছুটা বেশি, তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা এতটা বাড়েনি। তবে যাঁরা অত্যন্ত স্থূলকায় (বিএমআই ৩৫-এর বেশি), তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পাওয়া গেছে।


কেন রোগা হওয়া বেশি ঝুঁকিপূর্ণ? এক্ষেত্রে গবেষকরা কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন। যেমন-

১. গোপন রোগের প্রভাব: অনেক সময় গুরুতর রোগের কারণে ওজন কমে যায়, ফলে রোগা মানেই যে ফিট এমনটা ভাবার প্রয়োজন নেই। অনেকের শরীর মেদহীন দেখা গেলেও আসল সমস্যা থাকে ভেতরে।

 

আরও পড়ুনঃ চায়ে চিনি দিয়ে আর বিপদ ডাকবেন না! পরিবর্তে কাজে লাগান হেঁশেলের ৫ জিনিস, শরীর থাকবে ফিট, চেহারা সুন্দর


২. ফ্যাটের অবস্থান: শরীরে চর্বি কোথায় জমেছে, সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ভেতরের অঙ্গে জমা ‘ভিসেরাল ফ্যাট’ বেশি ক্ষতিকর, কিন্তু হিপ বা উরুতে জমা ফ্যাট তুলনামূলক কম ক্ষতিকর।


৩. সময় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন: আগে ধারণা ছিল, বিএমআই ২০-২৫ সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসায় এখন হয়তো সামান্য বেশি বিএমআই-ও তুলনামূলক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের ওজন একা কোনও মানদণ্ড নয়। একইসঙ্গে শুধু রোগা বা মোটা দেখলেই স্বাস্থ্যঝুঁকি বোঝা যায় না। ওজনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস, পেশির পরিমাণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবনধারার অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। তাই সুস্থতার জন্য যথাযথ পুষ্টি গ্রহণ এবং সঠিক ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মনে রাখবেন, বিএমআই একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলেও, এটি একমাত্র নির্ণায়ক নয়। দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য।