আবু হায়াত বিশ্বাস:‌ কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী সাংসদ। কিন্তু কাজ করেন বিজেপি নেতাদের মতো! নানা অজুহাতে দলীয় বৈঠকে হাজির থাকেন না। দিন কয়েক আগে সংসদীয় দলের বৈঠকে দেখা যায়নি। দলীয় অবস্থানের উল্টো পথে হেঁটে দল থেকে ক্রমেই দূরত্ব বাড়াচ্ছেন শশী থারুর।‌ এমন অবস্থায় দলীয় সাংসদ থারুরকে নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়ছে কংগ্রেসের। গত কয়েকমাস ধরেই দলীয় লাইনের উল্টো পথে হাঁটছেন তিনি। এমন অবস্থায় জল্পনা চলছে, ওই কংগ্রেসী সাংসদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গত কয়েকমাসে বার বার প্রশংশায় পঞ্চমুখ হয়েছেন মোদি সরকারের। বেশ কয়েক মাস ধরেই থারুরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাখামাখি চলছে। দু’‌জনেই প্রকাশ্যে দু’‌জনের প্রশংসাই শুধু করছেন না, কংগ্রেসকে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিভিন্ন দায়িত্বও দিয়েছেন শশী থারুরকে। ‘দলীয় লাইন’–এর বাইরে গিয়ে কাজ করার পুরস্কার পেয়েছেন থারুর। সম্প্রতি কেরলে স্থানীয় নির্বাচনে তিরুবনন্তপুরমে বিজেপির জয় পেয়েছে। তাঁর সংসদীয় এলাকায় বিজেপির উত্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন থারুর। কেরলে পুর নির্বাচনে বিজেপির খাতা খোলার নেপথ্যে কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের বিশ্বাস, প্রচার করলেও শশী থারুর কংগ্রেসের জয়ের জন্য কিছুই করেননি। বরং অনুগামীদের উৎসাহিত করেছিলেন যাতে বিজেপি ভোট পায়। বিজেপির জয়ে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন। 

এবার মোদি সরকার মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপাওয়ারমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, ২০০৫ (মনরেগা) নাম তুলে দিতে চাইছে। এই প্রকল্পের নতুন নাম হয়েছে বিকশিত ভারত–গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)। সংক্ষেপে ‘জিরামজি’। এই বিল নিয়ে যখন গোটা বিরোধী শিবির মোদি সরকারকে আক্রমণ করছে। তখন থারুর কার্যত সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। থারুর বলছেন, ‘সরকারের প্রস্তাবিত নতুন জি–রাম–‌জি বিলে মনরেগার নাম বদলানো নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। গ্রাম স্বরাজের ধারণা ও রাম রাজ্যের আদর্শ কখনও পরস্পরবিরোধী ছিল না, বরং এই দুই ছিল গান্ধীজির চেতনার যুগ্ম স্তম্ভ। গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্রদের জন্য একটি প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম মুছে ফেলা এই গভীর সহাবস্থানের প্রতি অবজ্ঞা। তাঁর শেষ নিঃশ্বাসে ছিল ‘রাম’–এর নাম, যেখানে কোনও বিভাজন ছিল না, সেখানে বিভাজন তৈরি করে তাঁর উত্তরাধিকারকে অসম্মান করা উচিত নয়।’ গোটা বিরোধী শিবির নতুন নাম নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণে নেমেছে। তখন থারুর বিজেপি নেতাদের মতো কথা বলছেন বলে অভিযোগ দলের নেতাদেরই।
 
গত এক বছরে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন বার বার। দলীয় লাইন অমান্য করে মোদি সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। পরিবারতন্ত্র নিয়ে নিবন্ধ লিখে দলের মধ্যেই বিতর্ক বাড়িয়েছেন শশী থারুর। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা প্রজেক্ট সিন্ডিকেট–এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্র’ ভারতের গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। সমালোচকরা মনে করছেন, আসলে পরিবারতন্ত্র নিয়ে থারুর গান্ধী পরিবারকেই নিশানা করেছেন। থারুরের নিবন্ধে যথারীতি উল্লসিত হয় বিজেপি। তিরুবনন্তপুরমের সাংসদকে সমর্থনও জানিয়েছিলেন এই ‘দুঃসাহস’ দেখানোর জন্য। ইন্দিরা গান্ধীর ইমারজেন্সি ঘোষণা নিয়ে প্রবন্ধ লিখে দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন। এছাড়াও ‘অপারেশন সিন্দুর’ ও প্রধানমন্ত্রী মোদির ভূয়সী প্রশংসা করায় তাঁর অবস্থান নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি তিনি পাঁচটি দেশে একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তুলে ধরেন–এই পদক্ষেপ বিজেপি নেতাদের প্রশংসাও কুড়িয়েছিল। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। অথচ তাঁর দলের নেতা ও লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে আমন্ত্রণই পাননি। অথচ নৈশভোজে গিয়েছিলেন থারুর। অনেকেরই প্রশ্ন, মোদির খাতায় ‘গুড’ বয় শশী কি শিগগিরই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন?