‘গুপ্তচর’ সন্দেহে মাকে খুন, তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় শেষযাত্রা লিয়ারিতে, রেহমান ডাকাতের চরিত্র ‘প্রাণ’ দিল অক্ষয় খান্নাকে
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭ : ৩৮
- 1
- 16
সিনেমা চলাকালীন হিরোর স্ক্রিণে হিরোর আগমন ঘটলেই শিস পড়তে থাকে সিনেমা হলে। কিন্তু ‘ধুরন্ধর’ ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। রেহমান ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করা অক্ষয় খান্নার প্রবেশ ঘটতেই হলে কান পাতা দায়। তাঁর অনস্ক্রিন উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
- 2
- 16
এই পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয় যে, সিনেমা প্রায়শই মুগ্ধ এবং ভয়ের মধ্যের সীমারেখাকে অস্পষ্ট করে দেয়। কারণ আদিত্য ধরের চলচ্চিত্রে রেহমান ডাকাতকে একজন ভয়ঙ্কর খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও। চরিত্রের বাস্তব গল্পটি কল্পকাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি নৃশংস এবং জটিল।
- 3
- 16
করাচির অন্যতম পুরনো এবং গরিবতম শহর লিয়ারিতে ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল রেহমান ওরফে রেহমান ডাকাত। লিয়ারি দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ, গ্যাং যুদ্ধ এবং দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। পুলিশ এবং অপরাধের আঁতাত ছিল অনেক গভীরে।
- 4
- 16
বিবিসি-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেহমান দাদ মহম্মদ এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজার পুত্র ছিলেন। তাঁর পরিবার আগে থেকেই অপরাধজগতে জড়িত ছিল। মহম্মদ এবং তাঁর ভাই মাদকের ব্যবসা চালাতেন। এই ব্যবসায় তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল ইকবাল ওরফে বাবু ডাকাত ও হাজি লালুর নেতৃত্বাধীন গ্যাংগুলি। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি তোলাবাজিতেও কুখ্যাত ছিলেন মহম্মদ ও তাঁর ভাই। এলাকা দখলের লড়াই লেগে থাকত প্রায়শই।
- 5
- 16
লিয়ারি পুলিশের প্রাক্তন এসপি ফাইয়াজ খান বিবিসিকে বলেন, “একই ব্যবসায় জড়িত অনেকগুলি গ্যাংয়ের মধ্যে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তেমনি এলাকা নিয়েও সংঘাত ছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিত। এমনই এক সংঘর্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী বাবু ডাকাত গ্যাংয়ের হাতে রেহমান বালোচের কাকা তাজ মহম্মদ নিহত হন।”
- 6
- 16
রেহমানের জগতে হিংসা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, এটি ছিল উত্তরাধিকার। অল্প বয়সেই অপরাধজগতে প্রবেশ তাঁর। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাজি ফাটানোয় বাধা দেওয়ায় একজনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। এর দু’বছর পর একটি বিবাদের জেরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেন।
- 7
- 16
১৯৯৫ সালে জেল থেকে পালানোর কয়েক মাস পরে নিজের বাড়িতেই মা খাদিজাকে গুলি করে হত্যা করেন রেহমান। তাঁর অভিযোগ ছিল, পুলিশের চর হিসেবে কাজ করত মা। তবে, অনেকেই বিশ্বাস করেন যে রেহমান ভেবেছিলেন তাঁর মা প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংয়ের এক সদস্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। ‘ধুরন্ধর’-এও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
- 8
- 16
১৯৯৫ সালে অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আড়াই বছর করাচি জেলে কাটিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় বালুচিস্তানে পালিয়ে যান। সেখানে নতুন উদ্যমে ও প্রচণ্ড আগ্রাসীভাবে তাঁর অপরাধ সাম্রাজ্য পুনর্গঠন শুরু করেন।
- 9
- 16
২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে রেহমান ডাকাত লিয়ারির অন্যতম শক্তিশালী গ্যাংলর্ড হিসেবে আবির্ভূত হন। ২০০৬ সালের মধ্যে তিনি বিপুল সম্পদ, সম্পত্তি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মালিক হন। তিনি তিনবার বিয়ে করেন এবং ১৩ জন সন্তান রয়েছে তাঁর। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, তাঁর সম্পত্তি শুধু করাচি এবং বালুচিস্তানেই নয়, এমনকি ইরানেও ছিল।
- 10
- 16
রহমানের উত্থান হয়েছিল রক্তের মধ্য দিয়ে। প্রাথমিকভাবে মাদক ও জুয়া চক্র চালানোর জন্য হাজি লালুর সঙ্গে হাতে মেলালেও, এই জুটি বেশি দিন টেকেনি। যা লিয়ারিকে নজিরবিহীন হিংসায় ডুবিয়ে দেয়। ধারণা করা হয়, পরবর্তী গ্যাং যুদ্ধে ৩,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
- 11
- 16
সব প্রতিদ্বন্দ্বিকে মুছে ফেলে লিয়ারিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছিলেন তিনি। খুন, মাদক পাচার, অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচা এবং তোলাবাজি সবেতেই একটাই নাম ছিলেন রেহমান। ধীরে ধীরে নিজের রাজনৈতির দল গঠন করেন। নাম দেন পিপলস আমান কমিটি। নিজেকে সর্দার আবদুল রহমান বালোচ খেতাবও দেন। রেহমান শুধু প্রভাব নয়, বৈধতা চেয়েছিলেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতার মাত্রাও বাড়তে থাকে।
- 12
- 16
২০০৬ সালে লিয়ারিতে শান্তি ফেরাতে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। নেতৃত্বে থাকেন চৌধরি আসলাম। ধুরন্ধরে তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত। ওই বছর টাস্ক ফোর্স রেহমান ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। যদিও তা খাতায় দেখানো হয়নি। রেহমানকে গ্রেপ্তারির পরে আসিফ আলি জারদারির ফোন পান আসলাম। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জারদারি আসলামকে বলেছিলেন, “রেহমানকে হত্যা করবেন না। কিছু হতে দেবেন না। মামলাগুলি আদালতে পেশ করুন। কোনও এনকাউন্টার করবেন না।”
- 13
- 16
এরপরে রেহমানকে পুলিশ কর্তাদের বাড়িতে গোপন হেফাজতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেও তিনি আবার পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। লিয়ারি টাস্ক ফোর্স তাঁর ফোনের তথ্যের সাহায্যে জাল পরিচয়পত্র-সহ কোয়েট্টার কাছে তাঁকে আটক করে। সেখানে ছিলেন আসলামও। রেহমান টাকার বিনিময়ে রফা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আসলাম রাজি হননি। পরে রেহমান এবং তাঁর তিনি সহযোগীর পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি, ৮০টিরও বেশি মামলা ছিল তাঁর নামে।
- 14
- 16
যদিও রেহমানের এনকাউন্টার নিয়েও বিতর্ক কম নয়। পিপলস আমন কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মৌলানা আবদুল মাজিদ সর্বাজির অভিযোগ, ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে তিন ফুট দূর থেকে রেহমানকে গুলি করা হয়েছিল। এনকাউন্টারে যা সম্ভব নয়।
- 15
- 16
‘ধুরন্ধর’ ছবির প্রথম পর্ব শেষ হয় রেহমানের মৃত্যু দিয়ে। এরপর কী হয় তা দেখা যাবে ‘ধুরন্ধর ২’-এ। অপেক্ষা করতে হবে মার্চ পর্যন্ত। বাস্তবজীবনে, রেহমানের শেষযাত্রায় লিয়ারির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনসমাগম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
- 16
- 16
