সম্প্রতি মেসির কলকাতা সফরে যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটল তা নিয়ে চর্চার অন্ত নেই। অভিযোগ, বহু দর্শক নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এলেও মাঠে মেসিকে ঠিকমতো দেখার সুযোগ পাননি। আর সেই অসন্তোষের আগুনের আঁচ এসে লাগে অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলির দিকে। কারণ দশর্কেরা যখন রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছিলেন আয়োজকদের ওপর, ঠিক তখনই সমাজমাধম্যমে ছড়িয়ে পড়ে মেসির সঙ্গে দাঁড়িয়ে তোলা শুভশ্রীর ছবি। আর তাতেই হিতে বিপরীত।

মোটা টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্বকাপজয়ী ফুটবল তারকাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাননি সাধারণ দর্শক। অথচ ‘তারকা’ তকমার জোরেই নাকি অনায়াসে মেসির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন শুভশ্রী, এনিয়েই চলতে থাকে চরম কটাক্ষ। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা বাদে এনিয়ে মুখ খুললেন নায়িকা। দিলেন কড়া জবাব। 

মেসির সঙ্গে ছবির তোলার ঘটনাকে ঘিরে তাঁর সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি পেয়েছেন বলে জানান শুভশ্রী। বলেন, “দুটো ছোট ছোট বাচ্চাকে বলা হচ্ছে মেরে ফেলা হবে। আমার কাছে মেল সহ নানা রকম প্রমাণ আছে। আমি একজন মা হিসেবে তো সেটা মেনে নেব না। আমি তো রাজনৈতিক নেতা নই, আমি অভিনেত্রী। বাচ্চাদের ওপর কেন বিষয়টা আসছে? আপনারাও একইরকম অন্যায় করে ফেলেছেন। এই ভিডিওর পরেও নিশ্চয়ই অনেকেই অনেক কথা বলবেন। বলুন, অসুবিধা নেই। কিন্তু নিজেদের মানবিকতাকে হারিয়ে ফেলবেন না। দুটো বাচ্চা কোনওভাবেই যুক্ত ছিল না। তাদেরকে প্লিজ টানবেন না।” 


সোমবার রাতে শুভশ্রী একটি ভিডিওর মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য জানান। তিনি বলেন, "আমাকে G.O.A.T ইভেন্টে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল। আমি সাড়ে ৮টা নাগাদ হায়াতে পৌঁছই। ১০-১০.১৫ নাগাদ ওনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। আমি ছবি তুলি। যখন আমি বেরিয়ে আসছি তখন ওদের পিআর টিম থেকে আমায় অনুরোধ করা হয়, যদি আমি যুবভারতীতে যাই তাহলে ওদের সুবিধে হয়। কারণ ওখানেও মেসিকে ঘিরে ওনাদের নানা রকম ব্যবস্থাপনা ছিল। আমি ছাড়াও মাঠে সৌরভ গাঙ্গুলি, শাহরুখ এবং মুখ্যমন্ত্রীর থাকার কথা ছিল। আমি রাজি হওয়ার পর হায়াত থেকে বেরিয়ে যুবভারতীতে যাই। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট তাঁবু করা হয়েছিল, যেখানে অনেকেই আমরা অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম।” 

মেসির অনুষ্ঠানে শুভশ্রীকেই কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী স্পষ্ট বলেন, “এই কথাটা উঠেছে আমার ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমাকেই কেন ডাকা হয়েছে? এটার উত্তর ওদের পিআর ভাল দিতে পারবে কেন আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়ছিল।” 

সমস্যা তৈরি হয় খানিক পরই। আসলে এরই মাঝে শুভশ্রী জানান যে তাঁর পিআর টিম থেকে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করা হয়। কিন্ত যুবভারতীতে জ্যামার লাগানো থাকায় পোস্ট করা যায়নি। আর দর্শকেরা যখন মেসিকে দেখতে না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন ঠিক তখনই সমাজমাধ্যমে সামনে আসে ফুটবল তারকার সঙ্গে অভিনেত্রীর ছবি। 

শুভশ্রীর কথায়, “সাড়ে ১১টা নাগাদ মেসি ঢোকেন। এবং তারপর যে ঝামেলা শুরু হয় তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি মাঠে বসে নিজে ওনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না, আপনারা কীভাবে দেখবেন? ম্যানেজমেন্টের খারাপ ব্যবস্থার জন্য এত সুন্দর অনুষ্ঠান হতে গিয়েও হল না। আমার একটা শুটিংয়ে যাওয়ার ছিল। সেখানে পৌঁছে অনেকক্ষণ পর আমি বুঝতে পারি যে ঘটনাটা কত বড় আকার নিয়ে নিয়েছে। এবং আমি কোনওভাবে জড়িয়ে পড়েছি। যখন আমি ইনস্টাগ্রাম খুলি তখন বুঝতে পারি যে আমার ছবি কিছুক্ষণ আগে পোস্ট হয়েছে। এবং প্রচুর জায়গায় শেয়ার হয়ে গেছে। এরপর শুরু হয় আরেকটা ঘটনা। তা হল আমাকে নিয়ে ট্রোলড করা।” 

শুভশ্রীর মতে, তিনি কোনওভাবেই দর্শকদের মেসিকে দেখতে না পাওয়ার কারণ নন। বরং গোটা ঘটনায় তাঁর সঙ্গেও অবিচার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিনেত্রী। “আমাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, অবজেক্ট বানিয়ে আপনারা এমন একটা অবস্থা তৈরি করলেন যেন মনে হল মেসি যখন মাঠে ঢুকেছেন আমি ওনাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা। আমি ওনার সঙ্গে ছবি তুলছিলাম একা। আমি কি আপনাদের ভিউ, ভিশন আমি ব্লক করেছি? আমি কি মাঠে কোথাও ছিলাম? আমার কী দোষ যে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং আমি হায়াতে গিয়ে ছবি তুলেছি সেটা দোষ?”, জবাব রাজ ঘরণির। 

আসলে শুভশ্রীর মতে ভুল সময়ে তাঁর ছবি পোস্ট হওয়ার কারণেই সাধারণ মানুষ হয়েতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার জন্য তিনি কোনওভাবেই দায়ী নন। অভিনেত্রীর কথায়, “আমি মানছি প্রযুক্তিগত কারণে ভুল সময়ে আমার ছবি পোস্ট হয়েছে। আর আমি ছবিটা ডিলিট করিনি। এটা আমার দোষ হতে পারে। আপনাদের সঙ্গে আমি সমব্যথী..আপনাদের কষ্টের রোজগার, আপনাদের স্বপ্নের মানুষকে দেখতে পেলেন না..যে বিশৃঙ্খলা ওখানে হল একই জিনিস তো আপনারা আমার সঙ্গেও করছেন। আমাকে নিয়ে যেভাবে নোংরামো চলছে..!”

প্রসঙ্গত, মুম্বইয়ে করিনা কাপুরকেও তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে মেসির সঙ্গে লেন্সবন্দি হতে দেখা গিয়েছে। তবে কি শুধুমাত্র বাংলায় অভিনয় করার জন্যই আসছে কটাক্ষ? প্রশ্ন তোলেন শুভশ্রী।