আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্রিটেনের এক বিরল ও আলোচনাযোগ্য মামলায় কর্মক্ষেত্রের ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে যে, কোনও পুরুষকে ‘টাকলা’ বা 'টেকো' বলে সম্বোধন করা যৌন-সম্পর্কিত হয়রানির অন্তর্ভুক্ত। রায়ে বলা হয়েছে, পুরুষদের মধ্যে টাক পড়া মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যায়, তাই এই মন্তব্য মূলত লিঙ্গ-সংক্রান্ত বৈষম্যের সঙ্গে যুক্ত।

ঘটনাটি ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের ব্রিটিশ বাং কোম্পানি-তে কর্মরত অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান টনি ফিন (বয়স প্রায় ৬০)–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রায় ২৪ বছর ধরে ওই সংস্থায় কাজ করার পর ২০২১ সালের মে মাসে তিনি চাকরি হারান। পরে তিনি অভিযোগ আনেন, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এক উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার সময় কারখানার সুপারভাইজার জেমি কিং তাকে ‘bald cunt’ বলে অপমান করেন।

ট্রাইব্যুনালের সামনে ফিন জানান, তিনি অশ্লীল ভাষা (‘Anglo-Saxon’ গালি) ব্যবহারে অতটা বিরক্ত হননি, কিন্তু ব্যক্তিগত চেহারা নিয়ে এই মন্তব্য তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারক জোনাথন ব্রেইন—যাঁরা রায় দেওয়ার সময় নিজেরাও ‘টাক’ হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, “এই মন্তব্য স্পষ্টতই অবাঞ্ছিত এবং অভিযোগকারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। এটি কর্মস্থলে এক ধরনের ভয়, শত্রুতা ও অপমানজনক পরিবেশ তৈরি করেছে।”

আরও পড়ুন: বিয়ে করেই কোটিপতি এই নবদম্পতি! নিমন্ত্রিতদের দিতে হলো বিশেষ 'চার্জ'

কোম্পানির আইনজীবী যুক্তি দেন যে, নারী-পুরুষ উভয়ই টাক হতে পারেন। তবে ট্রাইব্যুনাল মত দেয়, বাস্তবে টাক পড়া পুরুষদের মধ্যেই অনেক বেশি দেখা যায়, তাই এটি ‘লিঙ্গ-সম্পর্কিত’ বৈষম্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এই যুক্তি সমর্থনে তারা এক পুরনো মামলার উদাহরণ দেন, যেখানে একজন পুরুষ কর্মী এক নারী সহকর্মীর স্তনের আকার নিয়ে মন্তব্য করায় যৌন বৈষম্যের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।

রায়ে আরও বলা হয়, “যেভাবে স্তনের আকার নিয়ে মন্তব্য সাধারণত নারীদের উদ্দেশ্যে করা হয়, তেমনিভাবে ‘টাকলা’ বলা সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই এই মন্তব্য যৌন বৈষম্যের আওতায় পড়ে।” টনি ফিন এখন ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় আছেন। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পরবর্তী শুনানিতে নির্ধারিত হবে। এই রায় যুক্তরাজ্যে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-সম্পর্কিত হয়রানির সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে ধরা হচ্ছে।