আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ সময় ধরে যৌন সংসর্গ বা স্বমেহন না হলে তার প্রভাব শুধু মানসিক অবস্থায় নয়, শারীরিক ভাবেও বড়সড় সমস্যা তৈরি করতে পারে—সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন দাবি। অর্থাৎ, বহু পুরুষের মাঝে প্রচলিত কথার হাস্যরসিক অর্থ ছাড়িয়ে, ‘ব্লু বলস’ বা দীর্ঘ যৌন-বিরতি যে বাস্তবেই সমস্যা তৈরি করতে পারে, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন সামনে আসছে।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি মেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ফুলার্টনের অধ্যাপক ও সেক্স বিশেষজ্ঞ ড. তারা সুইনিয়াটিচাইপর্ন জানান, মাত্র এক মাস যৌন সংসর্গ বা হস্তমৈথুন ছাড়া গেলেই শরীরে ও মনে চাপ তৈরি হয়। তাঁর কথায়, “এ ধরনের বিরতি স্ট্রেস, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও রাগ বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই নেতিবাচক অনুভূতি পরবর্তী যৌনসুখ উপভোগ করার সক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। স্ট্রেসড মানুষ যৌনতা উপভোগ করতে পারে না।”
শুধু মানসিক চাপ নয়—যৌনহীনতা এবং হিংসার মধ্যেও সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করছে বেশ কিছু গবেষণা। ২০২১ সালে জার্নাল অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘদিন যৌনতা থেকে বিরত থাকা ও যৌন হতাশা কিছু ক্ষেত্রে আগ্রাসী আচরণ বা সহিংসতার প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত।
দীর্ঘ সময় যৌন মিলন না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় দাম্পত্য সম্পর্কের—এমনই মত সেক্স থেরাপিস্ট সারি কুপারের। তাঁর মতে, “যে দম্পতিরা নিয়মিত যৌনতা করেন না, তারা সম্পর্কের মধ্যে নরমভাব, সহমর্মিতা ও আপসের জায়গা কমিয়ে ফেলেন। পরস্পরকে দোষারোপ, অতিরিক্ত সমালোচনা অথবা অপরাধবোধ তৈরি করে প্রয়োজন মেটানোর প্রবণতা দেখা যায়।” তিনি আরও জানান, দীর্ঘ যৌনবিরতিতে কখনও কখনও এক পক্ষ সম্পর্ক খোলার প্রস্তাব দেয়, আবার কেউ কেউ গোপনে সম্পর্কের বাইরে গিয়ে যৌন প্রয়োজন মেটায়।
যৌনতার শারীরিক উপকারও বহু গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুসারে, মাসে অন্তত ২১ বার বীর্যপাত করলে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে। ড. সুইনিয়াটিচাইপর্নের মতে, “পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় যৌন সংসর্গ বা উত্তেজনা ছাড়া কাটলে পুরুষ ও নারীর যৌনাঙ্গে অ্যাট্রফি বা সংকোচন দেখা দিতে পারে।” অর্থাৎ, দীর্ঘ বিরতিতে যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক আকৃতি ও কার্যক্ষমতা কিছুটা হারাতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনে যৌনতার ওঠানামা স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যৌনবিরতি চললে তা নিয়ে লজ্জা না পেয়ে সঙ্গী বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করাই শ্রেয়। কারণ, যৌনতা শুধু আনন্দের মাধ্যম নয়—মানসিক ভারসাম্য ও শারীরিক সুস্থতার অন্যতম উপাদান। জীবনের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ বা সম্পর্কের জটিলতার কারণে অনেক সময় ‘ড্রাই স্পেল’ তৈরি হয়। তবে গবেষণা বলছে—যৌনতা কেবল ব্যক্তিগত পছন্দ বা অভ্যাস নয়, বরং সুস্থ শরীর, সুস্থ মন ও সুস্থ সম্পর্কেরও একটি প্রয়োজনীয় দিক।
