আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি বিস্ফোরণের 'হোয়াইট-কলার' সন্ত্রাসবাদী মডিউলের সদস্যরা ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। এবার তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডি-র গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, রাজধানীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জমি জালিয়াত হলেন জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকি। মৃত মালিকদের জমি বিক্রি করার জন্য নথি জাল করার অভিযোগে তিনি এখন তদন্তের মুখোমুখি।
সিদ্দিকিকে, ইতিমধ্যেই একটি অর্থ পাচার মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেপ্তার করেছে। গত ১০ নভেম্বর লালকেল্লা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি সিদ্দিকি। দিল্লি বিস্ফোরণের পর গোয়েন্দাদের আতসকাচে সিদ্দিকির তৈরি জাল নথি, অবৈধ জমি হস্তান্তর এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা একাধিক সংস্থা এবং ট্রাস্টের আর্থিক লেনদেন।
তদন্দে দেখা গিয়েছে, নয়াদিল্লির মদনপুর খাদরের খসরা নং ৭৯২-এর জমি, জাল জেনারেল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (জিপিএ) ব্যবহার করে সিদ্দিকির সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান তারবিয়া এডুকেশন ফাউন্ডেশনের কাছে 'বিক্রি' করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ৭ জানুয়ারি, এই নথিতে বেশ কয়েকজন সহ-মালিকের অধিকার বিনোদ কুমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাথু, যিনি ১৯৭২ সালে মারা গিয়েছেন
হরবংস সিং, যিনি ১৯৯১ সালে মারা গিয়েছেন
হরকেশ, যিনি ১৯৯৩ সালে মারা গিয়েছেন
শিব দয়াল, যিনি ১৯৯৮ সালে মারা গিয়েছেন
জয় রাম, যিনি ১৯৯৮ সালে মারা গিয়েছেন
১৯৭২ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে জমির এই মালিকদের মৃত্যু নথিভুক্ত করা সত্ত্বেও, তাঁদের নাম, স্বাক্ষর এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ জিপিএ-তে দেখা যাচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, "এই নথিটি সম্পূর্ণ জাল। একজন মৃত ব্যক্তি জিপিএ সম্পাদন করতে পারবেন না এবং এই ধরনের যেকোনও দলিল বাতিল এবং কর্তৃত্বহীন।"
জাল জিপিএ ব্যবহার করে, ২০১৩ সালের ২৭ জুন, একটি নিবন্ধিত বিক্রয় দলিল সম্পাদন করা হয়, যার মাধ্যমে জমিটি তারবিয়া এডুকেশন ফাউন্ডেশনকে ৭৫ লক্ষ টাকায় হস্তান্তর করা হয়। জীবিত এবং মৃত উভয় সহ-মালিকের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে বিনোদ কুমার দলিলটিতে স্বাক্ষর করেন।
তদন্তকারীরা বলছেন যে, স্থানান্তরটি সম্পূর্ণরূপে জাল জিপিএর উপর নির্ভরশীল, যার ফলে লেনদেনটি "প্রতিটি পর্যায়ে অবৈধ" বলে বিবেতচিত হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে যে, এভাবে মৃত বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যক্তিদের জমির কাগজপত্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হত।
সিদ্দিকির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্ত
পাবলিক রেকর্ড দেখায় যে, জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকি শিক্ষা, সফটওয়্যার, কৃষি ব্যবসা, গবেষণা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচালিত কমপক্ষে ১৫টি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত।
১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং সিদ্দিকির পরিচালনায় পরিচালিত আল-ফালাহ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তদন্তে জানা গিয়েছে যে, দাতব্য ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল নির্মাণ, ক্যাটারিং এবং অন্যান্য চুক্তির মাধ্যমে সিদ্দিকির পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলিতে পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ।
দিল্লি পুলিশ দু'টি এফআইআর দায়ের করার পর অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু করে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে- আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় NAAC স্বীকৃতির মিথ্যা দাবি করেছে এবং ইউজিসি আইনের ধারা ১২(বি)-এর অধীনে স্বীকৃত বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।
লালকেল্লা বিস্ফোরণের সঙ্গেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে, তদন্তকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। যার মধ্যে চিকিৎসা পেশাদার এবং ফরিদাবাদ সন্ত্রাসবাদী মডিউল এবং লালকেল্লার কাছে একটি গাড়ি বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
