আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর সম্ভাবনা আজও পুরোপুরি সদ্ব্যবহৃত হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দেশের কৃষিজ পণ্যের রপ্তানি পৌঁছেছে ৫১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অথচ বিশ্ব কৃষি রপ্তানি বাজারে ভারতের অংশ মাত্র ২.২ শতাংশ (সূত্র: WTO, ২০২৪)। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায় যে, ভারতীয় কৃষিতে রপ্তানির এক বিশাল অজেয় সম্ভাবনা এখনও অরুদ্ধই রয়ে গেছে। সরকার ১০০ বিলিয়ন ডলারের কৃষি রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, কিন্তু তা অর্জন করতে গেলে শুধুমাত্র উৎপাদন নয়, আন্তর্জাতিক মানের গুণগত মান রক্ষা করাও সমান জরুরি। বর্তমানে চাল, সামুদ্রিক পণ্য, মসলা, চিনি ও মহিষের মাংস — এই পাঁচটি পণ্যে ভারতের কৃষি রপ্তানির ৮২% নির্ভরশীল। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে হর্টিকালচার, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ও জিআই-ট্যাগযুক্ত পণ্যের দিকে ঝুঁকতে হবে।

আরও পড়ুন:  ট্রাম্পের 'মৃত অর্থনীতি' মন্তব্যে রাহুলের সুরে সুর: "মোদি-নির্মলা ছাড়া সবাই জানে ভারতের অর্থনীতি মৃত"

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দুই দশকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর হ্রাস পাওয়ায় ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটতে পারে। তাই এখন থেকেই ধানের বিকল্প খুঁজে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রক্রিয়াজাত ও উচ্চ-মূল্যের কৃষিপণ্য রপ্তানির রূপরেখা তৈরি করা উচিত। সরকার ২০১৮ সালে যে ‘কৃষি রপ্তানি নীতি’ গ্রহণ করেছিল, সেখানে ২০২২ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও পূরণ হয়নি। ১০০ বিলিয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চাই বৃহৎ বিনিয়োগ, আধুনিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ হাব, কৃষকদের সরাসরি প্রক্রিয়াকরণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত করা, ও আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো।

আরও পড়ুন: এমনিতে সাদামাটা ছবি, কিন্তু মহিলার ওইখানে ওটা কী? ভাইরাল ছবিতে বিভ্রান্তি, হাসিতে ফেটে পড়ছে নেটদুনিয়া

মহারাষ্ট্রের 'মহাগ্রেপস'-এর মতো সমবায়ী মডেল সফলভাবে কৃষকদের রপ্তানিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমন মডেলকে দেশব্যাপী প্রসারিত করতে পারলে কৃষকদের আয় বাড়বে ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। বর্তমানে আমেরিকা, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান ভারতের প্রধান কৃষিপণ্য আমদানিকারক দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি ভারতের রপ্তানির উপর বড় প্রভাব ফেলেছে। তাই ইউরোপ ও আফ্রিকার (বর্তমানে মাত্র ১৪% রপ্তানির গন্তব্য) মতো নতুন বাজারে প্রবেশ এখন অত্যাবশ্যক।

তবে রপ্তানির বড় বাধা হচ্ছে পরিকাঠামোর দুর্বলতা ও নীতিগত অনিশ্চয়তা। চাষের গেট থেকে বন্দরে পৌঁছানো পর্যন্ত যথাযথ ঠান্ডা সংরক্ষণ, গুদাম, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। একইসঙ্গে, পেঁয়াজ বা গমের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের রপ্তানি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে ভারতের বিশ্বস্ততার ওপর প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নানা সময় ভারতীয় চালের চালান প্রত্যাখ্যান হয়েছে কীটনাশকের মাত্রা বেশি থাকায়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও গুণগত মান রক্ষায় কড়া নজরদারি এখন সময়ের দাবি। ভারত কৃষি উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হলেও, রপ্তানি সক্ষমতায় সেই স্থানটা অধরা। তাই এখনই চাই দীর্ঘমেয়াদি নীতি, প্রণোদনা, আধুনিক পরিকাঠামো ও কৃষকদের সচেতনতা— তবেই হয়তো ১০০ বিলিয়নের লক্ষ্য বাস্তব রূপ পাবে।